ধাতুগত লক্ষণ এ হোমিওপ্যাথি ঔষধ (২০২৫) – হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় ধাতুগত ঔষধগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ধাতুগত ঔষধগুলির কার্যকারিতা ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশ কিছু নীতি রয়েছে। প্রথমত,ধাতুগত ঔষধগুলির কার্যকারিতা তার লক্ষণ ও প্রভাবগুলির উপর নির্ভর করে।
কোন ধাতুগত ঔষধের কোন লক্ষণ ও প্রভাবগুলি থাকে তা জানা থাকলে সেই ধাতুগত ঔষধ কোন রোগের চিকিৎসায় কার্যকর হতে পারে তা নির্ধারণ করা যায়। আজকে একটি গুরুত্বপূর্ণ টপিক নিয়ে আলোচনা করব,. আশা করি আপনারা আমার সাথেই থাকবেন।প্রথমে জেনে নেই কি কি টপিক নিয়ে আলোচনা করব-

- ধাতুগত লক্ষণ কাকে বলে?
- লাইকোপোডিয়াম
- ধাতুগত ঔষধ লাইকোপোডিয়াম ও ন্যাট্রাম মিউরের পার্থক্য কি?
- থুজা ঔষধের তুলনা
- মেডোরিনাম ও থুজার মধ্যে পার্থক্য
- থুজার রোগ লক্ষণের বৃদ্ধি কখন?
- মেডোরিনাম ও সালফারের মধ্যে পার্থক্য
- বাত লক্ষণে মেডোরিণাম
ধাতুগত লক্ষণ কাকে বলে?
ধাতুগত লক্ষণ বলতে হোমিওপ্যাথিতে মানসিক এবং শারীরিক বৈশিষ্ট্য বোঝানো হয়। একজন ব্যক্তি অন্যজনের থেকে ভিন্ন হতে পারে। ধাতু শব্দটি সাধারণত স্বভাব, চরিত্র, অভ্যাস, প্রকৃতি, আচরণ ইত্যাদি বিস্তৃত অর্থে ব্যবহৃত হয়।
ধাতুগত ঔষধ হোমিওপ্যাথির একটি স্তম্ভ বিশেষ। কাজেই লক্ষণ সাদৃশ্যে প্রয়োগ করতে পারলে মানব জাতির এমন কোন রোগ নাই যা সে অরোগ্য করতে পারেনা। এখানে কয়েকটি ধাতুগত ঔষধ নিয়ে আলোচনা করা হলো –
লাইকোপোডিয়াম
লাইকো পোডিয়াম একটি গভীর ধাতুগত ও সর্ব মায়াজমেটিক ঔষধ। ইহার ক্রিয়া বিস্তৃত ও গভীর। ইহা মানুষের জীবনের গভীর স্তরে প্রবেশ করে ও কোমল তন্তুসমূহের, রক্তবাহী নালী, অস্থি, লিভার, হার্ট ও সন্ধি সমূহের পরিবর্তন আনে। ইহা টিস্যুর বা তন্তুসমূহের যে পরিবর্তন আনয়ন করতে পারে তা লক্ষ্যণীয় কারণ ইহার অস্থিক্ষয়, বড় বড় ফোড়া, বিস্তারশীল ক্ষতসমূহ ও অতিশয় শীর্ণতা সৃষ্টির প্রবণতা আছে।
অর্থাৎ তিনটি মায়াজমের উপরই ইহার পূর্ণ দক্ষতা রয়েছে। রোগ লক্ষণের গভীরতা ও বিশালতার দিক থেকে লাইকো সালফার, ক্যালকেরিয়া কার্ব ও গ্রাফাইটিস ও ন্যাট্রাম মিউরের সমতুল্য ঔষধ। কাজেই লক্ষণ সাদৃশ্যে প্রয়োগ করতে পারলে মানব জাতির এমন কোন রোগ নাই যা সে অরোগ্য করতে পারেনা। ইহা হোমিওপ্যাথির একটি স্তম্ভ বিশেষ।
এই ঔষধটি মূলত: ঐ সমস্ত রোগীদের ক্ষেত্রে অধিকতর প্রযোয্য যারা বৃদ্ধ ও অকাল বৃদ্ধ অর্থাৎ বৃদ্ধ নয় কিন্তু বৃদ্ধের মত দেখায় এবং এই রোগী বৃত্তির দিক থেকে তীক্ষ্ণ কিন্তু শারীরিক ভাবে শুষ্ক।
বায়ুর প্রকোপ
- সমস্ত রোগ লক্ষণই বিকাল ৪টা হতে রাত ৮টার মধ্যে বৃদ্ধি পায় বা বৈকালে বৃদ্ধি।
- শরীরের ডান পার্শ্বেই ইহার লক্ষণগুলির প্রাধান্য থাকে এবং লক্ষণগুলি ডান হতে বাম দিকে অথবা উপর হতে নিচের দিকে, যথা- মস্তক হতে বক্ষে সনচারিত হয়।
- গরম খাদ্যে অভিলাষ।
- নিঃসঙ্গপ্রিয়তা, ভীরুতা, ও কৃপণতা।
ধাতুগত ঔষধ লাইকোপোডিয়াম ও ন্যাট্রাম মিউরের পার্থক্য কি?
লাইকোপোডিয়াম ও ন্যাট্রাম মিউর: ন্যাট্রাম মিউরের সর্ব শরীরে জ্বালা থাকে যে কারণে ঠান্ডা জলে গোসল করলে রোগী উপশম পায় এবং সকালের দিকেই তার যাবতীয় রোগ লক্ষণের বৃদ্ধি। আর লাইকোর বৃদ্ধি বিকাল ৪টা থেকে ৮টার মধ্যে বা বিকালের দিকে। সারাংশ: অকাল বার্ধক্য, বৈকালে বৃদ্ধি, বায়ুর প্রকোপ, গরম খাদ্যে অভিলাষ, ভীরুতা, কৃপণতা ও নিঃসঙ্গপ্রিয়তা।

থুজা ঔষধের তুলনা
ধাতুগত লক্ষণ এ হোমিওপ্যাথি ঔষধ তুলনা (Comparison-Tuja and Silicea in perspiration specially of face.)। থুজার রোগীর মাথা ব্যতীত অন্যান্য অনাচ্ছাদিত অংশে অথবা শুধুমাত্র মাথা ব্যতীত দেহের সর্বত্রই ঘাম হতে দেখা যায়(বিপরীত বেল, ক্যালকেরিয়া কার্ব, সাইলিসিয়া)
ঐ ঘামের আরও বৈশিষ্ট্য এই যে, নিদ্রিতাবস্থায় উহা অধিক নিঃসারিত হয় এবং নিদ্রা ভঙ্গের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বন্ধ হয়ে যায় (বিপরীত- কোনিয়াম, স্যাম্বুকাস)।উপরন্তু ইহার ঘাম তৈলাক্ত, মধুর মত গাঢ় এবং মৃগ নাভীবৎ গন্ধযুক্ত। থুজার ঘামের আর একটি অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য এই যে, জননেন্দ্রিয় স্থানের ঘাম সুমিষ্ট গন্ধযুক্ত।
কেবল মাত্র অনাবৃত স্থানে কিংবা মস্তক ব্যতীত শরীরের সর্বস্থানে ঘর্ম হয়(সাইলিসিয়ার বিপরীত) অথবা নিদ্রিতাবস্থায় ঘর্ম হয় এবং নিদ্রা ভঙ্গ হলেই ঘর্ম হওয়া বন্ধ হয়ে যায়(স্যাম্বুকাসের বিপরীত)।
যেন কোন অপরিচিত লোক তার সঙ্গে রয়েছে, যেন আত্মা এবং দেহ শরীর হতে বিচ্ছিন্ন, যেন পেটে জীবন্ত কোন বস্তু নড়ে বেড়াচ্ছে (ক্রোকাস,নাক্স মস্কেটা), যেন অসাধারণ কোন ক্ষমতার দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে, যেন সমস্ত শরীর কাচের দ্বারা প্রস্তুত এবং আঘাত লাগলেই ভেঙ্গে যাবে যে কারণে কাউকেই গাত্র স্পর্শ করতে দেয়না।
মেডোরিনাম ও থুজার মধ্যে পার্থক্য
মেডোরিনাম ও থুজা দুটি ঔষধই সাইকোসিস প্রধান ঔষধ। আমরা জানি জলে, জলো হাওয়ায় ও বর্ষাকালে রোগ লক্ষণের বৃদ্ধি সাইকোসিসের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। কিন্তু তা হলে কি হবে?
মায়াজমের বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে একটি ঔষধকে অন্য সকল ঔষধ থেকে আলাদা করা যায়না,আলাদা করতে হয় ঔষধটির বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণসমষ্টির উপর নির্ভর করে। মেডোরিনাম সাইকোসিস প্রধান ঔষধ হলেও জলো হাওয়ায় ও বর্ষাকালেই মেডোরিনামের রোগ লক্ষণসমূহের উপশম।
থুজার রোগ লক্ষণের বৃদ্ধি কখন?
অপরদিকে জলো হাওয়ায় ও বর্ষাকালেই থুজার রোগ লক্ষণের বৃদ্ধি। ঔষধ দুটির অন্যান্য পার্থক্যগত দিক হচ্ছে উপুড় হয়ে শয়নে রোগ লক্ষণের উপশম সাইকোসিসের একটি বৈশিষ্ট্যজনক লক্ষণ এবং এই লক্ষণটি মেডোরিনামে অধিকতর সুস্পষ্ট যা থুজায় অনুপস্থিত। মেডোরিনাম অধিকতর বাত প্রবণ এবং সে অল্পদিন পূর্বে সংঘটিত ঘটনাবলী মনে রাখতে পারেনা। অপরদিকে থুজা কল্পনাপ্রবণ, হঠকারী ও উত্তেজনাশীল।
Read More:ফসফরাস হোমিওপ্যাথি মেডিসিন
মেডোরিনাম ও সালফারের মধ্যে পার্থক্য
মেডোরিণাম এবং সালফার উভয় ঔষধেই প্রান্তদেশে অর্থাৎ, হাতের ও পায়ের তালুতে জ্বালা আছে এবং এই জ্বালার জন্য রাত্রে কেবলই ঠান্ডা স্থান খুঁজে বেড়ানো উভয় ঐষধেরই বৈশিষ্ট্য। উভয়েই শীতের দিনে হাত ও পা লেপের বাইরে রাখে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই জ্বালা সালফারে যতটা বিশিষ্টভাবে আছে মেডোরিণামে ততটা নেই।
মেডোরিণামের ঠিক জিঙ্কের মতই পাগুলির একটি স্নায়বিক অস্থিরতার জন্য সমস্ত রাত্রিই পাগুলি নাড়বার ইচ্ছে থাকে যা সালফারে থাকেনা। কাজেই উভয় ঔষধেই প্রান্তদেশে জ্বালা থাকলেও সালফারে জ্বালাই প্রধান আর মেডোরিণামে স্নায়বিক অস্থিরতাই প্রধান বৈশিষ্ট্য।
সালফার খুবই অপরিষ্কার ও অপরিচ্ছন্ন এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার কোন প্রবৃত্তিও তার থাকেনা যা মেডেরিণামে অনুপস্থিত।সালফারের চর্মরোগের ও তৎসহ চুলকানোর প্রবৃত্তি মেডোরিণামে নেই। সালফার দক্ষিণ পার্শেই শয়ন করতে চায়।মেডোরিণাম প্রায়ই বিশেষ করে শ্বাসযন্ত্রের রোগ লক্ষণ সমূহে উপুড় হয়ে শয়নে উপশম বোধ করে।
নিম্নদেশে অর্থাৎ কোমরে ও গায়ে বাতের লক্ষণ, অবশভাব অথবা টাটানি ইত্যাদি। মেডোরিণামের নিজস্ব যা সালফারে অনুপস্থিত। মেডারিণামের রোগীর কোমর হতে নিম্নাঙ্গ অর্থাৎ পা দুটিতে ভয়ানক স্নায়বিক বেদনা স্বাভাবিক, এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে পাগুলি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে অসাড় হয়ে পড়ে।
বহুদিন ধরে নানা প্রকারের ভীষণ জাতীয় যন্ত্রণা হওয়ার পর পা দুটি অসাড় ও অকর্মণ্য হয়ে পড়ে। আক্রান্ত স্থানগুলিতে অতিশয় টাটানি ও স্পর্শসহিষ্ণুতা থাকে। পায়ের পাতা বিশেষ করে গোড়ালি দুটি অতিশয় টাটানিযুক্ত হয়ে থাকে যে জন্য রোগী পা দুটির উপর ভর দিয়ে ভূমির উপর দিয়ে চলতে পারেনা, অগত্যা হাঁটু দুটির উপর ভর দিয়ে চলতে বাধ্য হয়।
বাত লক্ষণে মেডোরিণাম
মেডোরিণামের এই বাত লক্ষণ বর্ষাকালে বাড়ে এবং ক্রমাগত সঞ্চালনে উপশম হয়। অর্থাৎ প্রথম সঞ্চালনটি অতিশয় কষ্টদায়ক হয়, তারপর সঞ্চালন যতই বাড়তে থাকে কষ্ট ততই কমতে থাকে এবং এটিই মেডোরিণামের বাত লক্ষণের বৈশিষ্ট্য।এ অস্থায় কোমরটি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং ক্রমেই শীর্ণতা হতে থাকে।
উপসংহার
আমি আশা করি “ধাতুগত লক্ষণ এ হোমিওপ্যাথি ঔষধ (২০২৫)’ এ ব্লগটি পড়ে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা’ সম্বন্ধে ভাল ধারণা লাভ করেছেন।আমার এই ব্লগ যদি আপনাদের কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানান অথবা যে টপিক সম্পর্কে জানতে চান অনুগ্রহপূর্বক আমাকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন,সোশ্যাল মিডিয়াতে অথবা আমার পেজে।
আমি চেষ্টা করব আপনাদের মনের মত করে উত্তর দেওয়ার জন্য। নিয়মিত আরো বিভিন্ন বিষয়ে আর্টিকেলগুলো পেতে হলে অবশ্যই আমার ওয়েবসাইটে ভিজিট করবেন। ধৈর্য ধরে এতক্ষণ আমার সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
সিটি হোমিও রূপায়ন মিলেনিয়াম স্কয়ার,
দোকান নং-116( গ্রাউন্ড ফ্লোর -70, 70/Aপ্রগতি শরণি,
উত্তর বাড্ডা, ঢাকা 1212,বাংলাদেশ।
01736181642
Resources: https://bangladeshhealthalliance.com/blog/
2 thoughts on “ধাতুগত লক্ষণ এ হোমিওপ্যাথি ঔষধ (২০২৫)”
Comments are closed.