ডিপ্রেশনের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা- মানুষের মনের অসুখ গুলোর মধ্যে অগ্রগণ্য স্থান দখল করে রেখেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অভিমত অনুসারে বর্তমানে পৃথিবীতে ডিপ্রেশনের পরিমাণ বেড়ে গেছে খুব বেশী।

পৃথিবীতে হৃদরোগের পর ডিপ্রেশনই সবচেয়ে বড় সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমান বিশ্বে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন এরও বেশী মানুষ এই ডিপ্রেশনে আক্রান্ত।ডিপ্রেশন এত গভীর হওয়া সত্ত্বেও দেখা গেছে যে প্রায় ৮০শতাংশ রোগীর রোগ নির্ণয় হয় না, চিকিৎসা তো পরের কথা।
সমীক্ষা অনুযায়ী যে সমস্ত রোগী আত্মহত্যা করে তারা কখনো মনোচিকিৎসার সাহায্য নেন নি। ডিপ্রেশন শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয় সপ্তদশ শতকে। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক হিপোক্রেটস একে মেলানকলিয়া নামে উল্লেখ করেন।
বর্তমানে একে “মুড ডিস অর্ডার” বলা হয়ে থাকে। আব্রাহাম লিংকন, উইনস্টন ,চার্চিল, এমনকি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো বিখ্যাত ব্যক্তিরাও কোন কোন সময়ে এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন ।
ডিপ্রেশন কেন হয়
মূলত দুটি কারণে মানুষ ডিপ্রেশনের শিকার হয়-
১। জৈবিক কারণে, ২। পরিবেশগত কারণে।

জৈবিক কারণ-
ক) সেরোটোনিন/ Serotoninএবং ডোপামিন/Dopamine নামক নিউরোট্রান্সমিটারের/ monoamine neurotransmitter ঘাটতি।
খ) থাইরয়েড,এফ এসএইচ হরমোন FSH hormone/কমে যাওয়া।
২। পরিবেশ- অনেক সময় ডিপ্রেশন রোগের রোগীর পারিবারিক,আর্থিক বা সামগ্রিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। যেমন – মা-বাবা বা বড়দের দ্বারা বাচ্চাদের নিয়মিত বকাবকি করা, বড়দের দ্বারা অপমানিত হওয়া, জীবনে অশান্তি, স্বামী স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য এবং
একাকীত্ব বোধ, কর্মক্ষেত্র থেকে অবসরের পর বন্ধু বিচ্ছেদ,নিকট জনের মৃত্যু, অর্থ হানি, সামাজিক প্রতিষ্ঠিতা ক্ষুন্ন হওয়া, বৃদ্ধ বয়সে নানা রকম কারণে- চলাফেরার অক্ষমতা, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, ছোটদের থেকে সম্মান না পাওয়া, কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত চাপের জন্য পরিবারে সময় দিতে না পারা ইত্যাদি। এছাড়াও কিছু কিছু ফ্যাক্টর আছে যা ডিপ্রেশনের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় যেমন –
- পারিবারিক ইতিহাস- ডিপ্রেশন বা আত্মহত্যার ইতিহাস থাকলে।
- লিঙ্গ- পুরুষদের মধ্যে মহিলাদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক।
- মেয়েলি সমস্যা- অনেক মহিলার সন্তান প্রসবের কিছুদিনের মধ্যে গভীর বিষণ্নতা দেখা দেয়।আবার অনেকের মাসিক হওয়ার আগে তলপেটে,কোমর,স্তনে ব্যথার সঙ্গে মন খারাপের লক্ষণ দেখা যায়।
- বয়স চল্লিশের ঊর্ধ্বে এর প্রকোপ বেশি তবে বর্তমানে স্কুলে অতিরিক্ত চাপ,বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আর্থিক দিক দিয়ে নিজেকে তুলনা করা, কেরিয়ারের চিন্তা ইত্যাদির জন্য কিশোর-কিশোরীদের মধ্যেও ডিপ্রেশন উদ্বেগজনক ভাবে বাড়ছে।
- রোগ- প্যারালাইসিস ,পারকিনসন ডিজিজ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস ইত্যাদি দীর্ঘ মেয়াদী অসুস্থতা।
- নেশা- মদ্যপান বা অন্যান্য নেশার দ্রব্য সেবন।
- ঔষধ- কিছু ব্লাডপ্রেসারের ঔষধ, ডিজিটালিস, কর্টিকোস্টেরয়েড, মিথাইল, প্রপানোলন এমনকি গর্ভনিরোধক বড়ির দীর্ঘ ব্যবহারেও ডিপ্রেশনের সৃষ্টি করে।
কিভাবে বুঝব রোগীটি ডিপ্রেশনের শিকার
সর্বক্ষণ কিছু না কিছু চিন্তায় মগ্ন থাকা, মনোযোগের অভাব, রোগ রোগ বাতিক।কিছু শারীরিক লক্ষণ- মুখের শুষ্কতা, বুক ধড়ফড় করা, শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা, কোষ্ঠবদ্ধতা ইত্যাদি।
Read More:হোমিও ঔষধের নামের তালিকা ও কাজ
ঘুম আসতে দেরি হওয়া,বারবার ঘুম ভেঙে যাওয়া, ভোর রাতে ঘুম ভেঙে যাওয়া ও আর ঘুম না আসা, ঘুম ভাঙার পর ক্লান্তি বোধ, আরো শুয়ে থাকতে ইচ্ছা, মৃতের স্বপ্ন দেখা ইত্যাদি।
কোন কাজে উৎসাহ না পাওয়া, আগেই যে কাজগুলো ভালো লাগতো সেগুলো ভালো না লাগা। হীনমন্যতা নিজেকে অযোগ্য ও অন্যদের থেকে নিকৃষ্ট ভাবা। যৌন ক্ষুধার অভাব জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা আত্মহত্যার কথা চিন্তা করা হলো
ডিপ্রেশনের প্রথম ধাপ।আত্মহত্যার চিন্তা- কি হবে বেচে থেকে এধরনের কথা যখন রোগীর মুখে বলে তখন তার ডিপ্রেশনের দ্বিতীয় ধাপ ধাপ।
এরপরও উপরোক্ত লক্ষণ এর পরও যদি রোগীকে ডাক্তার এর কাছে কাছে না নিয়ে যাওয়া হয় তো কিছুদিনের মধ্যেই সে আত্মহত্যা করে ইহলোক ত্যাগ করে।
ডিপ্রেশন থেকে বাঁচার উপায়
শরীর ও মনে সমন্বয়ে গঠিত এক আশ্চর্য যন্ত্র এই মানবদেহ। আমাদের মন যেহেতু এই জীবন্ত দেহের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে তাই চিকিৎসা বিজ্ঞানী হ্যানিম্যান বলেন হোমিওপ্যাথিতে ডিপ্রেশনের মত মানসিক রোগের চিকিৎসা ও শরীরের অন্যান্য অংশের মতো শারীরিক ও মানসিক লক্ষণ নিয়ে করতে হয়। ডিপ্রেশনে একমাত্র হোমিওপ্যাথিই পারে রোগীকে একটা সুন্দর জীবন উপহার দিতে।

ডিপ্রেশনে হোমিওপ্যাথি ঔষধ
ডিপ্রেশনে উল্লেখযোগ্য ঔষধ হচ্ছে-
মানসিক কষ্ট থেকে যদি ডিপ্রেশনে যায় তো দেখাগেছে সিপিয়া/Sepia, স্ট্যাফিসেগ্রিয়া/ staphisagria, ইগ্নেশিয়া, নেট্রাম মিউর ইত্যাদি।আবার মানসিক স্ট্রেসজনিত অবসাদ থেকে যদি ডিপ্রেশনে যায় তখন উইথেনিয়া, স্ট্যামোনিয়াম।
আত্মহত্যা প্রবণতা থাকলে দূর করে, অরাম মেট, নেট্রাম সালফ, এন্টিম ক্রুড। মেনোপজ এর সময় মানসিক অবসাদ থাকলে অরাম মেট, অরাম মিউর ন্যাট প্রভৃতি ঔষধ দেওয়া যায়।
অরাম এ রোগীর বংশে হাইপারটেনশনের ইতিহাস ও আলসার, ফিস্টুলা, ক্যান্সার প্রকৃতির রোগের ইতিহাস থাকে। অনেক সময় নিচের এই ওষুধগুলো দরকার পড়ে।
ম্যানসিনেলা
বয়ঃসন্ধির সময় অবসাদের প্রধান ঔষধ। রজঃনিবৃত্তিকালীন অবসাদেও ব্যবহৃত হয়। এর সাথে যদি থাকে অত্যাধিক যৌন চাহিদা।
এমন কার্ব
বর্ষাকালে ঝড়বৃষ্টির সময় মন খারাপ থাকলে এই ওষুধটি কখনো ব্যর্থ হয় না
ইস্কুলাস হিপ
শুচিবাইগ্রস্ত অবসাদ মানসিক ও শারীরিক ক্লান্তি এবং ঘুম থেকে উঠে জড়তা মন খারাপ এর তিনটি লক্ষণ একসাথে থাকলে অবশ্যই ইস্কুলাস হিপ দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
সিমিসিফুগা
মাসিকের সময় রজঃনিবৃত্তির পর গর্ভধারণের পরবর্তী অবসাধে মহামূল্যবান ঔষধ। রোগী মনে করে তার জীবন যেন গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত। মনে করে সে যেন কোন আবদ্ধ অবস্থায় আছে সেখান থেকে বেরোনোর কোন রাস্তাই নেই।
সাইক্লামেন
সাইক্লামেন হল শীতকাতর পালসেটিলা রোগী ডুকরে ডুকরে কাঁদে, সব সময় নিজেকে দোষী ভাবে। চাপা দুঃখ প্রকাশ করতে চায় না।
হেলোনিয়াস
ডায়াবেটিস রোগীর মধ্যে যদি অবসাদ দেখা দেয় তার সাথে যদি থাকে কাজকর্মের মধ্যে থাকলে রোগী ভালো থাকে। একা থাকলে রোগের বৃদ্ধি, বিরুদ্ধ মত সহ্য করতে পারে না। তখন আমরা হেলোনিয়াস এর কথা চিন্তা করতে পারি।
ইন্ডিগো
নার্ভের রোগের ঔষধ।সব সময় কাজে ব্যস্ত থাকতে চায়, রোগী অবসাদগ্রস্ত থাকে।
লিলিয়াম টিগ
নিজেকে সব সময় মহান বিজ্ঞ ভাবে। অত্যন্ত যৌন চাহিদা। একসঙ্গে অনেক কাজ সম্পন্ন করতে চায়। কিছু না করতে পারলে গভীর অবসাদে ভোগে।
ফসফোরিক এসিড
দীর্ঘদিন বিভিন্ন মানসিক দুঃখ কষ্টে জর্জরিত থাকার জন্য ডিপ্রেশন শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। শারীরিক ভাবে অক্ষম, যৌন অক্ষম, মানসিক দুর্বলতা, সাংসারিক সমস্ত ব্যাপারে উদাসীন থাকে।নেশাদ্রব্য ও ঔষধের অপব্যবহার জড়িত অবসাদ।
https://www.seo-forum.se/https://www.seo-forum.se/