টিউমার কিউর হোমিওপ্যাথিতে- টিউমার অপারেশন করলে ক্যান্সার হয়। হোমিওপ্যাথিতে রোগ নয় রোগীর চিকিৎসা করা হয় এখানে তাই তুলে ধরা হলো হোমিওপ্যাথিতে। রোগীর চিকিৎসা করলে যা যা রোগ আছে সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। আমার এক বন্ধুর সাথে একটি অনুষ্ঠানে দেখা। এক সময় আমরা একই ক্লাশে একই কলেজে পড়তাম। বর্তমানে সে একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরি করে, সে আমাকে বলল,“বন্ধু, তুমি তো হোমিওপ্যাথিক প্র্যাকটিস কর, দেখতো আমার একটি উপকার করতে পার কিনা।” আমি বললাম,“চেষ্টা করে দেখতে পারি”আচ্ছা –
হোমিওপ্যাথিতে কি টিউমার এর কোন চিকিৎসা আছে?
সে বলল,“আমার স্ত্রী এতই সন্দেহপ্রবণ ও বদমেজাজী যে, তাকে নিয়ে সংসার করা আমার জন্য অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। তোমাদের হোমিওপ্যাথিতে কি এর কোন চিকিৎসা আছে?আমি তাকে বললাম,“হ্যা, আছে।” সে বলল,“কিন্তু এ রোগের চিকিৎসার কথা বললে সে চিকিৎসার জন্য তোমার কাছে আসবে না,তাহলে কি করা যায়?আমি বললম,“তার কি আরো কোন রোগ আছে?” সে বলল,“তেমন কোন রোগ নেই, তবে ডাক্তার বলেছে জরায়ুতে টিউমার আছে।”
রোগীর লক্ষণ সমষ্টিতে যা পাওয়া গেল
যাহোক, টিউমারের চিকিৎসার কথা বলে সে তার স্ত্রীকে আমার চ্যাম্বারে নিয়ে আসে।রোগীর লক্ষণ সমষ্টিতে যা পাওয়া গেল তা হচ্ছে, হাতে ও পায়ে দারুণ জ্বালা ও অস্থিরতা। একারণে শীতকালে হাত পা লেপের বাহিরে রাখতে হয়।বাতাস ছাড়া থাকতে পারেনা। প্রচুর ক্ষুধা ও প্রচুর পিপাসা, ঘুমের মধ্যেও পানি খায়। লবণ ছাড়া ভাত খেতে পারেনা।মানসিক লক্ষণের মধ্যে পাওয়া গেল ব্যস্ততা ও চঞ্চলতা।
পূর্বেই জানা গিয়েছিল যে রোগী অত্যন্ত সন্দেহ প্রবণ ও বদমেজাজী। উপরোক্ত লক্ষণ সমষ্টির সাদৃশ্যে রোগীকে মেডোরিনাম প্রয়োগ করার পর থেকে রোগীর মানসিক এবং সার্বদৈহিক লক্ষণগুলি ক্রমান্বয়ে চলে যেতে থাকে। ৪ সপ্তাহ পরে বন্ধু আমাকে ফোন করে জানাল, ‘বন্ধু, রোগীর মানসিক ও শারীরিক লক্ষণের অনেক উন্নতি হয়েছে এবং টিউমারটিও ছোট হতে শুরু করেছে। কিন্তু ৫বছর আগে ইনজেকশন দিয়ে জরায়ুর যে সাদা স্রাবটি ভাল করা হয়েছিল সেই সাদা স্রাবটি আবার দেখা দিয়েছে। এখন কি করা যায়?”

আমি তাকে বুঝিয়ে বললাম,“বন্ধু, যে সাদা স্রাবটি তুমি বলছ ভাল হয়েছিল,উহা আসলে ভাল হয়নি, চাপা পড়েছে। জরাযুর এ সাদা স্রাব আগের মত পূর্ণভাবে পুনরায় দেখা দিবার পর আবার একাই চলে যাবে। এ স্রাব আগের মত দেখা না দিলে রোগী পরিপূর্ণভাবে সুস্থ হবেনা এবং টিউমারটি দ্রুত ভালো হবে না। বুঝিয়ে বলাতে বন্ধু এবং তার স্ত্রী ধৈর্য ধারণ করতে রাজী হলো। এর পর দেখা গেল স্রাব যত বাড়তে থাকল টিউমারটিও তত ছোট হতে থাকল। ৫মাস পরে টিউমারটি একেবারেই অদৃশ্য হয়ে গেল। তার কিছুদিন পর স্রাবটিও উধাও হয়ে গেল।
সাদা স্রাব কি?
সাদা স্রাব হল যোনি থেকে নিঃসৃত একটি স্বাভাবিক তরল বা শ্লেষ্মা। এটি মৃত ত্বকের কোষ, ব্যাকটেরিয়া এবং জরায়ুমুখ এবং যোনির শ্লেষ্মা দ্বারা গঠিত। সাদা স্রাব সাধারণত পরিষ্কার বা সাদা হয় এবং এতে কোনও গন্ধ থাকে না। তবে, কিছু ক্ষেত্রে, সাদা স্রাব ঘন, চুলকানি বা দুর্গন্ধযুক্ত হতে পারে। এটি একটি সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে।
এখানে লক্ষ্যনীয় বিষয় হচ্ছে, লক্ষণ সমষ্টি সংগ্রহের সময় রোগী লজ্জাবশত তার জরায়ুর সাদা স্রাব যা ইনজেকশন দিয়ে চাপা দেয়া হয়েছিল তা আমার কাছে বলেনি। এ স্রাব হচ্ছে সাইকোসিসের ফল যাকে হ্যানিম্যান রোগীর চিহ্ন (Signs) নামে অভিহিত করেছেন। ইহাও এক প্রকার লক্ষণ যাকে বলা হয় বস্তুগত লক্ষণ (Objective symptom)| এ স্রাব প্রকৃতপক্ষে রোগ নয়, রোগের ফল মাত্র। রোগীর প্রকৃত রোগ হচ্ছে সাইকোসিস।
বিসদৃশ চিকিৎসায় চিকিৎসক রোগীর রোগের ফলকে চাপা দিতে পেরেছিলেন কিন্তু প্রকৃত রোগকে চাপা দিতে পারেননি ।ফলে রোগটি ক্ষিপ্ত হয়ে আগের চেয়ে আরো অধিকতর শক্তি নিয়ে জীবনী শক্তিকে আক্রমণ করে। এতে জীবনী শক্তির বহির্মূখী গতিটি আরো বেশী পরিমাণে বাধাগ্রস্ত হওয়ায় সে পূর্বের চেয়ে অধিকতর জটিল লক্ষণ সমষ্টি (Signs & symtoms) যেমন প্রচন্ড সন্দেহপ্রবণতা, মারাত্বক বদমেজাজ, হাতে পায়ে জ্বালা, অতিরিক্ত লবণ খাওয়া, সবসময়েই পিপাসা, জরায়ুতে টিউমার ইত্যাদি প্রকাশ করেছিল।
আবার রোগীর বর্তমান সেই লক্ষণ সমষ্টির সাদৃশ্যে চিকিৎসা দেয়াতে রোগী আরোগ্যও হয়ে গেল। এখানে পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে বিসদৃশ চিকিৎসায় রোগীর লক্ষণ সমষ্টি কিভাবে সাপ্রেস হয়েছিল এবং কিভাবে আবার লক্ষণ সমষ্টির সাদৃশ্যে রোগী সাপ্রেসন মুক্ত হলো। মনে রাখবেন, রোগী বলোক বা না বলুক, স্বীকার করুক বা না করুক, হোমিওপ্যাথিক ঔষধের মধ্যে সৃষ্টিকর্তা এমন ক্ষমতা দিয়েছেন যে সদৃশ পন্থায় প্রয়োগ হলে চাপা পড়া রোগ লক্ষণ সে প্রকাশ করবেই করবে এবং তারপর রোগী আরোগ্যও হয়ে যাবে।।
যারা প্রকৃতই সদৃশ চিকিৎসা পদ্ধতি শিখে নিতে পেরেছেন এবং প্রতিনিয়তই চিকিৎসাকার্যে ব্যাপৃত আছেন তাঁদের কাছে এ ধরণের উদাহরণ একে বারেই স্বভাবিক এবং নিত্য দিনের ব্যাপার। কারণ ইহাই যে হোমিওপ্যাথির নিয়ম।
Read Moreহোমিওপ্যাথি মেডিসিন ও চিকিৎসা
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার প্রকৃত নিয়ম কি?
অবশ্য প্রকৃতই যে আরোগ্য সাধক তিনি চিকিৎসা শুরুর আগে রোগীকে অবশ্যই বলে নেবেন যে,“আপনার যদি পূর্বে কোন রোগ কিংবা রোগ লক্ষণ চাপা পড়ে থাকে তাহলে চিকিৎসা গ্রহণকালীন সেটা অবশ্যই দেখা দিবে বা দিতে পারে, তা না হলে আপনি পরিপূর্ণভাবে আরোগ্য হতে পারবেননা.” হ্যানিম্যানের নির্দেশ এরকমই।
2 thoughts on “টিউমার কিউর হোমিওপ্যাথিতে”
Comments are closed.