ব্রেস্ট ক্যান্সার সচেতনতা ও প্রতিরোধ

ব্রেস্ট ক্যান্সার সচেতনতা ও প্রতিরোধ নিয়ে আমরা প্রায়ই আমাদের সমাজে একে অপরের মধ্যে কথা বলতে শুনে থাকি। ব্রেস্ট ক্যান্সার বর্তমান সময়ে বহুল আলোচিত একটি জটিল রোগ। মেয়েদের ক্ষেত্রে বিশেষ করে একটু বয়স্ক মহিলাদের জন্য এটি অত্যন্ত ভীতিকর একটি রোগ।

ব্রেস্ট ক্যান্সার সচেতনতা ও প্রতিরোধ
ব্রেস্ট ক্যান্সার সচেতনতা ও প্রতিরোধ

বর্তমানে আমাদের দেশে ক্যান্সার যে হারে বেড়ে চলেছে সেখানে দেখা যায় যে, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১৩ হাজারের বেশি নারী ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় এবং মারা যায় ৮৭৮৩ জন। এনজিও সংস্থা IARC- এর হিসেব মতে- ১০০ জন নারীর মধ্যে ১৯ জন নারী ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়।

বিশ্বে প্রতি ৮জন নারীর মধ্যে ১জন নারী ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকিতে রয়েছে। ১৭০০ সালে ইতালীয় চিকিৎসক বার্ণার ডিনো রামাজিনি সর্বপ্রথম লক্ষ্য করেন, সন্ন্যাসিনীদের মধ্যে ব্রেস্ট ক্যান্সারের হার বেশী। 

অধিকাংশ মহিলাদের ক্ষেত্রে এ সমস্যাটা এখন দেখা দিচ্ছে। ব্রেস্ট ক্যান্সার কেন হয়? কি কারণে এ রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে? ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে আমি আমার ব্লগে এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। আশা করছি আপনারা আমার সাথে থাকবেন, চলুন আলোচনা শুরু করা যাক। 

যেসব টপিকগুলো নিয়ে আলোচনা করব

  • ব্রেস্ট ক্যান্সার কি?
  • ব্রেস্ট ক্যান্সার কেন হয়।
  • ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ।
  • ব্রেস্ট ক্যান্সার কাদের বেশি হয়ে থাকে।
  • স্তনের কোন অংশে বেশি হয়। 
  • সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ন লক্ষন।
  • Pathological investigation
  • Investigation for staging or distant metastasis 
  • ব্রেস্ট ক্যান্সারের প্রতিরোধ।
  • ব্রেস্ট ক্যান্সার থেকে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সচেতনতা। 
  • উপসংহার 

ব্রেস্ট ক্যান্সার কি?

স্তন গ্রন্থির ম্যালিগনেন্ট টাইপের পিন্ডকে ব্রেস্ট ক্যান্সার বলা হয়ে থাকে। এটি একটি ভীতিকর চিন্তা, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এটি অনেকের জন্য একটি বাস্তবতা। আমরা প্রথমেই যে বিষয়টা বলে থাকি যে, মেয়েদের ইস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরন হরমোনের ভাবসাম্য হীনতা এই রোগের জন্য বিশেষভাবে দায়ী।

আর এটাও সত্য কথা যেটা পুরুষ এবং নারী উভয়ের ব্রেস্ট ক্যান্সার হতে পারে। যদিও পুরুষদের ব্রেস্ট ক্যান্সার ৫% কম। মেয়েরাই বেশি আক্রান্ত হয় এ রোগে। 

ব্রেস্ট ক্যান্সার সচেতনতা ও প্রতিরোধ

ব্রেস্ট ক্যান্সার সচেতনতা ও প্রতিরোধ

যেটা ম্যালিগন্যান্ট সেটা দূষিত প্রকৃতির আর যেটা benign tumor সেটা ক্যান্সার না সাধারণত কোন সমস্যার সৃষ্টি করে না। ব্রেস্ট ক্যান্সার ডায়াগনস্টিকের ক্ষেত্রে ব্যথা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ না। ব্যথা থাকতেও পারে নাও থাকতে পারে। 

ব্রেস্ট ক্যান্সার কেন হয়?

সাধারণত খাওয়া দাওয়াই এর জন্য প্রথমত দায়ী। মদ্যপানের সাথে ধূমপান একসাথে করলে ব্রেস্ট ক্যান্সার বেশি হয়। ফর্সা হওয়ার জন্য মেয়েরা বিভিন্ন কসমেটিক ব্যবহার করেন এটাও ব্রেস্ট ক্যান্সারের জন্য অনেকটা দায়ী। প্রকৃত কারণ কেউ বলতে পারে না। এখন আমি আপনাদের সাথে ব্রেস্ট ক্যান্সার কেন হয় তা তুলে ধরছি।

  • বংশে স্তন ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে এই রোগ সাধারণত বেশি হতে পারে। 
  • শরীরের ওজন বৃদ্ধি ও বেশি পরিমাণে চর্বি জাতীয় জিনিস খেলে এই রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। 
  • নি:সন্তান নারীদের স্তন ক্যানসার হবার সম্ভাবনা অধিক থাকে।
  • কুমারী মেয়েদের মাস্টারবেশন এর জন্য স্তন ক্যানসার হতে পারে।
  • দেরীতে গর্ভধারণ হলে স্তন ক্যানসার হতে লক্ষ্য করা গেছে।
  • যেসব মহিলা ৩০বছর বয়সের পরও অবিবাহিত, যাদের বিয়ে হয়নি কিংবা অল্প বয়সে বিধবা হয়ে যান, তাদের এই রোগ তুলনামূলক বেশি হতে পারে। 
  • এক্স-রে ক্যানসারের অন্যতম কারণ। এক্স-রে ব্যবহারে মাত্র ৬ বছরের মধ্যে ত্বক-ক্যানসার ও পরবর্তীকালে রক্ত- ক্যানসার হতে দেখা যায়।
  • যাদের দ্রুত ঋতুস্রাব শুরু (১২বছরের আগে) এবং দেরীতে মেনোপজ হয়েছে তাদের স্তন ক্যানসার হতে পারে। 
  • মেনোপজের পরেও যে সকল নারী হমমোন থেরাপী চালিয়ে যান তাদের এ রোগ হতে পারে ৷
  • ১বৎসরের কম সময় শিশুকে মাতৃদুগ্ধ পান করানো জন্য এ রোগ হতে পারে৷ 
  • আঘাত থেকেও ব্রেস্ট ক্যান্সার হতে পারে। 
  • কিছু ভাইরাস সংক্রমণ থেকে ক্যানসার হতে দেখা যায়৷ যেমন, অ্যাপস্টাইন বার ভাইরাস থেকে বারকিট লিম্ফোমা। 
  • ধূমপান এবং মদ্যপানে এ রোগ খুব বেশি হতে দেখা যায়।
  • কিছু খাদ্যাভ্যাসও ক্যানসারের কারণ হতে দেখা গেছে। শিক কাবাব জাতীয় আগুনে ঝলসে বা সেঁকে নেওয়া যেকোনও মাংস বা মাছে থাকতে পারে ক্যানসার উৎপন্নকারী যৌগ। ছাতা পড়া বাদাম, গম, ময়দা, নুনে সংরক্ষিত খাদ্যদ্রব্য যেমন, নোনা মাছ, শুটকি মাছ প্রভৃতির সাথে ক্যানসারের যোগসূত্র রয়েছে ।
  • তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ক্যানসারের অন্যতম কারণ। জাপানের হিরোসিমা নাগাসাকিতে আণবিক বোমা বিস্ফোরণ সেখানে ক্যানসারের মাত্রা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। রাশিয়ার চেরনোবিল দুর্ঘটনার ফলে ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। ভারত সরকার পোখরানে যে আণবিক বিস্ফোরণ ঘটালো তার ফল ভোগ করার সময় এসে গেছে বলে বিজ্ঞানীদের অভিমত।

ব্রেস্ট ক্যান্সারের কিছু লক্ষণ 

প্রথম পর্যায়ে যদি ব্রেস্ট ক্যান্সার শনাক্ত করা যায় তাহলে এরোগ থেকে দ্রুত রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এটা দেখার জন্য প্রথমেই ডাক্তারের কাছে যাওয়ার দরকার নেই। ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়েছে কি না নিজেই পরীক্ষা করা যায়।

প্রতিটা মেয়েরই উচিত ১৭বছরের পর থেকে মাসে একবার হলেও নিজের স্তন নিজেই পরীক্ষা করা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে পরীক্ষা করব? প্রতিবার মাসিক শেষ হওয়ার দশ দিনের মধ্যে গোসলের পর ভেজা অবস্থায় আয়নার সামনে বসে বা দাঁড়িয়ে এই পরীক্ষা করতে হয়। 

ঘড়ির কাঁটার উল্টোদিকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে হাত দিয়ে মেসেজ করতে হয়। সবগুলো আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিয়ে দেখতে হবে কোনো শক্ত চাকা বা গোটা বা টিউমার আছে কি না। বাম হাত দিয়ে ডান স্তন দেখতে হবে এবং ডান হাত দিয়ে বাম স্তন দেখতে হবে।

যে স্তন দেখবেন সে পাশের হাত মাথার উপরে উঠিয়ে রাখবেন। চলুন জেনে নেয়া যাক, কি কি লক্ষণ দেখলে বুঝবো যে, ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়েছে। প্রথমেই জেনে নেয়া যাক, সার্বদৈহিক পরিবর্তন কি কি দেখা যায়।  

  • ক্ষুধা কমে যাবে।
  • শরীরের ওজন কমে যাবে । 
  • দেহে রক্তস্বল্পতা দেখা দিবে।  
  • স্তনে হাত দিয়ে দেখলে স্তন শক্ত বলে মনে হবে, আক্রান্ত স্তনে শক্ত টিউমার পাওয়া যাবে। 
  • নিপল ভেতরে ঢুকে যাবে, নিপলের আশেপাশে রাস বা ফুসকুড়ি দেখা দিবে। স্তনের বোঁটা শুষ্ক হয়ে যাবে।    
  • স্তনের আকৃতিগত পরিবর্তন দেখা যাবে, একটা বড় একটা ছোট দেখা যাবে।
  • আক্রান্ত স্তন ভারি মনে হবে এবং পরবর্তী সময়ে ব্যথা অনুভূত হবে। 
  • স্তনের চামড়ার রং পরিবর্তন হবে, স্তন ফুলে থাকবে ও কুঁচকে যাবে । 
  • আক্রান্ত স্তনের দিকে কালো অথবা ঘাড়ের লসিকা গ্রন্থি ফুলে যাবে এবং হাত দিয়ে দেখলে শক্ত টিউমার অনুভূত হবে। 
  • নিপল থেকে তরল রস বের হতে পারে। আক্রান্ত দিকের বাহু ফুলে যেতে পারে।
  • নিপল ভিতরে ঢুকে যাবে। 

সর্বাধিক গুরুত্বপূ্র্ণ লক্ষণসমূহ

  • পাথরের মতো শক্ত পিণ্ড দেখতে পাবেন। 
  • নিপল ভিতরে ঢুকে যাবে।
  • বগলে পিণ্ড বা টিউমার দেখতে পাবেন। 
  • স্তনের আকৃতিগত বিকৃতি দেখা দিবে।
  • স্তনের বর্ণবিকৃতি দেখা দিবে।

ব্রেস্ট ক্যান্সার কাদের বেশি হয়ে থাকে?

বাংলাদেশের নারীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সম্পর্কে অসচেতন। যে কোনো প্রকার রোগ হলে তারা অবহেলা করেন। ব্রেস্ট ক্যান্সার হলে লজ্জার কারণে তারা কাউকে বলতে চান না, ডাক্তারের কাছে যেতে চান না। নারীরা কোনো শারীরিক পরিশ্রম বা এক্সারসাইজ করতে চান না।

মাংস, ফাস্টফুড ছাড়া খেতে চান না। আজকালকার জেনারেশন শাকসবজি পছন্দ করে না। খাওয়া তো দূরের কথা, ফাস্টফুড আসক্তির কারণে স্থূলতা বেড়ে মোটা হয়ে যায়। এবার জেনে নেওয়া যাক ব্রেস্ট ক্যান্সার কাদের বেশি হয়ে থাকে। 

  • পরিবারে স্তন ক্যান্সারের ইতিহাস আছে এমন নারীদের। যেমন মায়ের বংশের আত্মীয়দের মধ্যে ব্রেস্ট ক্যান্সার বেশি হয়।
  • যারা স্বাস্থ্য সচেতন না বিশেষ করে মোটা ব্যক্তিরা।
  • ব্রেস্টের সেভ ঠিক রাখার জন্য বাচ্চাকে তার স্তন পান করান না। যার জন্য BRCA-1, BRCA-2 নামক জিনের মিউটেশনের কারণে atypical ductal বা lobular hyperplasia নামে স্তনের অসুখ সর্বাপেক্ষা বেশি দায়ী। 
  • অনেকদিন (১০বছরের পরেও) ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বা হরমোনের ইনজেকশন নিলে।
  • পশ্চিমা বিশ্বে অধিক বিশেষ করে জাপানীদের বেশী হতে দেখা যায়।
  • গায়ের রং এর জন্যও হতে পারে বিশেষ করে কালো মেয়েদের থেকে ফর্সা মেয়েরা আক্রান্ত হয় বেশি। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের অধিবাসীদের গাত্রবর্ণ সাদা। এদের ত্বক-ক্যানসারের হার অত্যধিক বেশী।
  • যারা সর্বক্ষণ ব্রা পরে থাকেন, ব্রা সম্পর্কে সচেতন না, সঠিক মাপের ব্রা ব্যবহার করেন না।
  • যারা বেশি পারফিউম ব্যবহার করে।
  • ব্রেস্ট ক্যান্সার পূরুষদের সাধারণত বেশি বয়সে দেখা যায় আর মেয়েদের কম বয়সেই ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যায়।
  • যত বয়স বৃদ্ধি পাবে সাথে সাথে এ রোগ হবার ঝুঁকি তত বাড়তে থাকে। 
  • দেরীতে গর্ভধারণ হলে বা আদৌ না হলে স্তনের ক্যানসার হতে লক্ষ্য করা গেছে।
  • যাদের দ্রুত ১২বছরের আগে ঋতুস্রাব শুরু এবং দেরীতে ৫৫বছরের পরে মেনোপজ হয় তাদের স্তনের ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
  • এক স্তনে ক্যান্সার হলে অপর স্তনে ক্যন্সার হবার ব্যপক ঝুঁকি থাকে।

স্তনের কোন অংশে বেশি আক্রান্ত হয়

ক্যান্সার কোষগুলি ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবেশী কোষ ও অঙ্গে রোগ-বীজ বপন করতে পারে। কেন্দ্রীয় স্নায়ু আক্রান্ত হলে Sensory এবং Psychological defect হবে।নিপলে হলে লিভার বা ফুসফুস আক্রান্ত করে জন্ডিস বা বুক ব্যথা, কাশি, কাশির সাথে রক্ত যাবে।

বগলে হলে হাত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে এবং হাতে ব্যথা হবে। ঘাড়ে বা গলায় হলে কণ্ঠনালী আক্রান্ত হবে। এবার দেখে নেওয়া যাক কোন কোন অঙ্গে কত পারসেন্ট হয়ে থাকে। 

  • Upper outer quadrant এ সবচাইতে বেশী হতে দেখা যায় ( 60%)
  • Upper inner quadrant এ 12% 
  • Lower outer quadrant 10% 
  • Lower inner quadrant এ 6%
  • Central 12%

ব্রেস্ট ক্যান্সারের প্রতিরোধ 

সেটা খুব কম যে, একটা স্টেজে আক্রান্ত দিকের বাহু ফুলে যেতে পারে। শুরুতেই যদি পদক্ষেপ নেওয়া যায় তাহলে ব্রেস্ট ক্যান্সারের আতঙ্ক থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব। 

  • টাটকা ফল ও শাকসব্জি খাওয়া, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম করা এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া।
  • প্যাকেটজাত খাবার, ফাস্ট ফুড এবং চর্বি জাতীয় খাবার বর্জন করা। 
  • শিক কাবাব জাতীয় আগুনে ঝলসে বা সেঁকে নেওয়া যেকোনও মাংস বা মাছে থাকতে পারে ক্যানসার উৎপন্নকারী যৌগ। ছাতা পড়া বাদাম, গম, ময়দা, নুনে সংরক্ষিত খাদ্যদ্রব্য যেমন, নোনা মাছ, শুটকি মাছ প্রভৃতির সাথে ক্যানসারের যোগসূত্র রয়েছে । তাই এগুলো না খাওয়া।
  • চিনি, মিষ্টি ও কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বাদ দেওয়া। 
  • সঠিক মাপের ব্রা পরা। বাড়িতে যতক্ষণ থাকা হয় বিশেষ করে রাত্রে শোয়ার সময় ব্রা না পরা।
  • সবরকম স্প্রে ও ফর্সা হওয়ার জন্য যেসব কসমেটিক রয়েছে সেগুলি ত্যাগ করা।  
  • সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ত্বক-ক্যানসার সৃষ্টি করে। তাই সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত রোদ এড়িয়ে চলা।
  • এক্স-রে ক্যানসারের অন্যতম কারণ। তাই এক্স-রে এড়িয়ে চলাই উত্তম। 
  • ধূমপান এবং মদ্যপান ত্যাগ করা। 
  • ১ বছরের বেশি সময় ধরে বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করাতে হবে।   
  • দীর্ঘদিন ধরে বা ১০ বছরের অধিক সময় জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বা হরমোনের ইনজেকশন না নেওয়া। 
  • অল্প বয়সে জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খেলে ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে তাই এ বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টি দেওয়া।  
  •  অতিরিক্ত গরম, কঠিন বা তরল খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে। তাই খাবারের প্রতি মনোযোগী হওয়া।  

Pathological investigation

টিউমার হলেই  ক্যান্সার নয় তার জন্য ডায়াগনস্টিকের দরকার। জেনে নেওয়া যাক কি কি প্যাথলজিক্যাল টেস্ট আমরা দিব। 

  • FNAC from breast lump. 
  • Mammography.
  • Hb%.
  • Blood grouping and factor.

 

Investigation for staging or distant metastasis

  • Chest X-ray P/A view.
  • Serrum alkaline phosphatase.
  • Gamma glutamine transaminase.
  • Liver ultrasound.

ব্রেস্ট ক্যান্সারের সচেতনতা 

ব্রেস্ট ক্যান্সার সচেতনতা ও প্রতিরোধ এ সারা বিশ্বে ১০ অক্টোবর ব্রেস্ট ক্যান্সার সচেতনতা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। স্তনে ক্যানসার হওয়ার সূচনাতে হঠাৎ স্তনে বা অন্যত্র এক বা একাধিক দলা বা পিণ্ড বা গুটলি দেখা যায়।

যদিও শতকরা ৯০ ভাগ গুটলি সৃষ্টি হয় নির্দোষ benign টিউমারের জন্য। একমাত্র সচেতনতার মাধ্যমে ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। ব্রেস্ট ক্যান্সার শনাক্ত করার জন্য এখন চিকিৎসা বিজ্ঞানে আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির আবিষ্কার হয়েছে। 

ব্রেস্ট ক্যান্সার সচেতনতা ও প্রতিরোধ

ব্রেস্ট ক্যান্সার সচেতনতা ও প্রতিরোধ

এবার আসুন জেনে নেওয়া যাক, ব্রেস্ট ক্যান্সার থেকে বাঁচার জন্য কি কি সচেতনতা আমদের অবলম্বন করা প্রয়োজন।     

  • লজ্জা পেলে চলবে না, কোনোরকম সন্দেহজনক কিছু দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়।
  • প্রয়োজনে বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার করা, প্রাথমিকভাবে কিভাবে নিজে নিজে স্তন পরীক্ষা করব, তার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা। 
  • গ্রামে গ্রামে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে মেয়েদের সচেতন করা যেতে পারে। যেমন শারীরিক ব্যায়ামগুলো জেনে নেওয়া, লাল মাংস বাদ দিয়ে কিভাবে মজাদার শাকসব্জি নিরামিষ রান্না করা যায়, তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। 
  • ফরমালিনমুক্ত খাবার পাওয়ার জন্য বাসা বাড়ির আঙ্গিনায় বা টবে কিভাবে সবজি চাষ করা যায় সে ব্যাপারে সচেতন করা।  
  • মহিলারা সবচেয়ে বেশী আক্রান্ত হন ব্রেস্ট ক্যান্সারে। সেজন্য মাসে একবার বা মাঝে মধ্যে স্তন পরীক্ষা করা প্রয়োজন। 
  • ভিটামিন ডি পাওয়ার জন্য সূর্যের আলো শরীরে গ্রহণ করুন (১০টা থেকে ২টা মধ্যে মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর্যন্ত) এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান।  
  • সন্দেহজনক কিছু পাওয়া গেলে নিশ্চিত হওয়ার জন্য Mammogram অথবা একটি X-ray করাবেন। আরো নিশ্চিত হওয়ার জন্য  Biopsy করাবেন। Biopsy দুই ধরনের হয়ে থাকে 1. Aspiration Biopsy এবং 2. Surgical Biopsy.
  • একমাত্র Mammogram এর মাধ্যমে স্তনের আকৃতি বুঝে প্রাথমিক পর্যায়েই কান্সার শনাক্ত করা যায়।

এজন্য আপনাদের প্রতি বিনীত অনুরোধ, আতঙ্কিত হবেন না। প্যাথলজি টেস্ট করে নিশ্চিত হন ক্যান্সার হয়েছে কি না। অবহেলা করে মূল্যবান সময় অপচয় করবেন না। দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হন।

তবে চেষ্টা করবেন স্তনে কোন লাম্প হলে হোমিওপ্যাথি ডাক্তারদের শরণাপন্ন হওয়ার। হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারদের শরণাপন্ন হওয়ার কথা কেন বলছি কারণ টিউমার অপারেশন করলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। ক্যান্সার চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

       Read More:এব্রোটেনাম হোমিও ঔষধ

আর আমাদের দেশে কিছু ডাক্তাররা রোগীদের প্রথমেই অনেক আতঙ্কিত করে দেয়। রোগীদের ভয় দেখায়। ভয় দেখানোই তাদের একটা চিরাচরিত্র পেশা। যে ডাক্তার যত বেশী রোগীকে ভয় দেখাতে পারবে তাদের পকেট তত ভারী হবে। এটাই হল তাদের ধর্ম।

এটা বাংলাদেশের ডাক্তারদের একটা জঘন্য অপরাধ। এর জন্যই বাংলাদেশে অনেক রোগী দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে, বিভিন্ন দিকে ছোটাছুটি করে, সর্বস্বান্ত হয়ে সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে একসময় মৃত্যুবরণ করে। আর সেই রোগীর পরিবার একেবারে নিঃস্ব হয়ে মানবেতর জীবন কাটায়।  

উপসংহার

ব্রেস্ট ক্যান্সার সচেতনতা ও প্রতিরোধ জন্য সবশেষে বলবো আত্মবিশ্বাসী হন। সাহস রাখেন, নিজের জন্য কিছু সময় বের করুন। নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হন। মনে রাখবেন নিজে ভালো থাকলে আপনি আপনার পরিবারকে সুস্থ রাখতে পারবেন। পরিবার এবং চারপাশের পরিবেশ হলো আপনার পৃথিবী।

তাই নিজেকে ভালোবাসুন পরিবারকে ভালোবাসুন তাদেরকে ব্রেস্ট ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতন করুন। ব্রেস্ট ক্যান্সার নিয়ে আমার এ ক্ষুদ্র প্রয়াস ছোট্ট লিখাটি ভালো লাগলে শেয়ার করবেন। পরবর্তীতে ক্যান্সারের প্যাথলজি রিপোর্ট কিভাবে দেখতে হয়, কিভাবে বুঝবেন এবং স্তন ক্যান্সারের রোগীর পথ্য বা কি কি খাবার খেতে হবে, কি কি খাবার খাওয়া যাবে না, তা নিয়ে লিখব ইনশাল্লাহ। ধৈর্য ধরে এতক্ষণ আমার সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

Resources:

1. https://en.wikipedia.org/wiki/Breast_cancer

2. https://www.roche.com.bd/bn/solutions/focus-areas/oncology/breast-cancer

 

Share this content:

Dr. Khatun invites you to join her in this journey with City Homeo. Your engagement and encouragement are crucial in advancing this endeavor. Together, we can strive towards a healthier community and a better tomorrow.