নারীর মানসিক স্বাস্থ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, এটা যে কোনও বয়সের মানুষেের হতে পারে। এটাকে সমাজের অবহেলা করা উচিত নয়। নারীরা পুরুষদের তুলনায় মানসিক অসুস্থতার ঝুঁকি বেশি থাকে এবং তারা প্রায়শই তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলিকে কারো কাছে বলতে বা সাহায্য চাইতে দ্বিধাবোধ করে।

এটি অদৃশ্য যুদ্ধে পরিণত হতে পারে, এটি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে, এমনকি আত্মহত্যার দিকেও নিয়ে যেতে পারে। অধিকাংশ লোকেই মনে করেন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা মানেই মানসিক রোগ, অনেকটা ভারসাম্যহীন, পাগল।
অনেকেই এ বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে সংকোচবোধ করেন। এমনকি এই প্রচলিত ভুল ধারণার কারণে মানসিক স্বাস্থ্যের খারাপ দিকে গেলোও লোকলজ্জার ভয়ে তা আড়াল করেন।
আজকের ব্লগে আমি আলোচনা করব নারী মানসিক স্বাস্থ্য: অদৃশ্য যুদ্ধের বিপরীতে কিভাবে এ থেকে প্রতিরক্ষা প্রতিরোধ করা যায় চলুন আলোচনা শুরু করা যাক।
চলুন আজকে আমরা জানবো কি কি টপিক গুলো আলোচনা করব –
- মানসিক স্বাস্থ্য কি?
- নারীর মানসিক স্বাস্থ্য:সমস্যার লক্ষণ
- নারীর মানসিক স্বাস্থ্য: কারণ
- জেনেটিক কারণ
- হরমোনাল কারণ
- নারীর মানসিক স্বাস্থ্য: রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতা
- নারীর মানসিক স্বাস্থ্য:বিষণ্ণতা
- নারীর মানসিক স্বাস্থ্য:উদ্বেগ
- নারীর মানসিক স্বাস্থ্য: ঘুম
- ঘুমের সমস্যার জন্য কিছু সাধারণ কারণগুলি হল
- ঘুমের সমস্যায় সমাধান
- নারীর মানসিক স্বাস্থ্য: খাওয়ার ব্যাধি
- নারীর মানসিক স্বাস্থ্য:আত্মহত্যা
- নারীর মানসিক স্বাস্থ্য: জীবনের ঘটনা
- কেন নারীর মানসিক স্বাস্থ্য এত গুরুত্বপূর্ণ?
- নারীর স্বাস্থ্য টিপস
- আমাদের কি করা উচিত
- উপসংহার
মানসিক স্বাস্থ্য কি?
আসুন আমরা প্রথমে জেনে নেই মানসিক স্বাস্থ্য কি?মানসিক স্বাস্থ্য হলো একজন ব্যক্তির চিন্তা, আবেগ এবং আচরণের অবস্থা। এটি একটি শারীরিক স্বাস্থ্যের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক স্বাস্থ্য ভাল থাকলে একজন ব্যক্তি তার জীবনে ভালভাবে কাজ করতে পারে এবং সুখী থাকতে পারে। মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ থাকলে একজন ব্যক্তির জীবনে নানা রকমের সমস্যা হতে পারে।
পুরুষদের তুলনায় নারীরা মানসিক অসুস্থতায় ভোগেন বেশি, কিন্তু চিকিৎসা পান কম। দেশের প্রধান দুটি মানসিক হাসপাতালে নারীদের জন্য শয্যার সংখ্যাও অনেক কম। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মানসিক স্বাস্থ্যও অসুস্থ নারীর যথাযথ চিকিৎসা পাওয়ার পথে নানা বাধা – মানবসমাজের নিকট লজ্জা, কুসংস্কার আর পরিবারের অবহেলা।
নারীর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ
এবার চলুন জেনে নেই নারী মানসিক স্বাস্থ্য: সমস্যার লক্ষণ লক্ষণগুলো কি? কোন নারীর মধ্যে যদি দেখা যায় অল্পতেই খুব রেগে যায়, ভাঙচুর করে, বাবা-মা,স্বামী সন্তান,অথবা ভাই বোনের সঙ্গে বা বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে পারে না। পড়ালেখায় আগ্রহ নেই, ঘুম হয় না, খাওয়াদাওয়া ঠিকমতো করে না।
তাহলে আমরা বুঝে নিতে পারি এর মধ্যে কোন মানসিক সমস্যা আছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কি কি লক্ষণগুলো দেখলে আমরা বুঝব যে এটা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা। মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যার লক্ষণগুলি ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে পরিবর্তন হতে পারে, তবে কিছু সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:
- দুঃখ: দীর্ঘস্থায়ী দুঃখ, হতাশা বা আগ্রহের অভাব
- উদ্বেগ: উদ্বেগ, উদ্বেগ বা ঘাম
- নিদ্রার সমস্যা: ঘুমাতে অসুবিধা, ঘুম থেকে উঠতে অসুবিধা বা খুব বেশি ঘুমানো
- ক্ষুধার পরিবর্তন: খাওয়ার অভাবের অভাব, অত্যধিক খাওয়া বা অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস
- শক্তির অভাব: ক্লান্তি, অলসতা বা শক্তির অভাব
- মনোযোগের সমস্যা: মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে অসুবিধা, সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা বা স্মৃতি সমস্যা
- আত্মহত্যার চিন্তা বা আচরণ: আত্মহত্যার চিন্তা, আত্মহত্যার হুমকি দেওয়া বা আত্মহত্যার চেষ্টা করা
নারীর মানসিক স্বাস্থ্য কারণ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে স্বাস্থ্য হলো একটি শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক সুস্থতার অবস্থা। নারীদের মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যাগুলি চিহ্নিত করা এবং এটি সমাধান করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া অতি জরুরি। নারীদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অনেকগুলি কারণ রয়েছে।
কিছু সাধারণ কারণ হল:পিরিয়ডের আগে ও পরে নারীদের শরীর এবং মনে বিশেষ ধরনের পরিবর্তন হয়। এ থেকে মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা তৈরি করে। তাহলে জেনে নেওয়া যাক বেশিরভাগ নারী মানসিক স্বাস্থ্য কি কি কারণে হয় এবং তার আংশিক সমাধান –
নারীর মানসিক স্বাস্থ্য অদৃশ্য যুদ্ধের বিপরীতে
জেনেটিক কারণ
নারী মানসিক স্বাস্থ্যের জেনেটিক কারণগুলি এখনও পুরোপুরি বোঝা যায়নি, তবে কিছু বিশেষজ্ঞরা ইঙ্গিত দেয় যে কিছু জিন রয়েছে যা বিষণ্ণতা, উদ্বেগ এবং অন্যান্য মানসিক অসুস্থতার ঝুঁকিকে ফেলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে বিষণ্ণতার সাথে যুক্ত একটি জিন যাদের বিষণ্ণতার ইতিহাস আছে তাদের মধ্যে আরও বেশি দেখা যায়।
হরমোনাল কারণ
হরমোন হল রাসায়নিক বার্তাবাহক যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ এবং টিস্যুকে নিয়ন্ত্রণ করে। হরমোনগুলি আমাদের মেজাজ, আবেগ, ঘুম, খাদ্যের পছন্দ এবং যৌনতা সহ আমাদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের অনেক দিককে নিয়ন্ত্রণ করে। নারীরা পুরুষদের তুলনায় হরমোনের মাত্রায় বেশি পরিবর্তন অনুভব করেন।
নারীদের মানসিক স্বাস্থ্যের হরমোনাল কারণগুলি হলো-
- প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি – প্রোজেস্টেরন হরমোনটি মাসিক চক্রের দ্বিতীয়ার্ধে উৎপন্ন হয় এবং এটি মেজাজকে নিয়ন্ত্রিত করতে পারে। প্রোজেস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে কিছু নারীর মধ্যে হতাশা, উদ্বেগ, ক্লান্তি এবং মেজাজ পরিবর্তনের মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
- ইস্ট্রোজ হরমোনের মাত্রা হ্রাস:- ইস্ট্রোজ হরমোনটি মেনোপজের সময় হ্রাস পেতে থাকে এবং এটিও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। ইস্ট্রোজ হরমোনের মাত্রা হ্রাস পেলে কিছু নারীর মধ্যে হতাশা, উদ্বেগ, স্মৃতি সমস্যা এবং ঘুমের ব্যাঘাতের মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
- ইস্ট্রোজ হরমোনের মাত্রা হ্রাস – থাইরয়েড হরমোনটি শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য প্রয়োজন, যার মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যও অন্তর্ভুক্ত। থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা কম বা বেশি হলে মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি – কর্টিসল হরমোনটি স্ট্রেসের কারণে উৎপন্ন হয় এবং এটি মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে কিছু নারীর মধ্যে হতাশা,উদ্বেগ, ঘুমের ব্যাঘাত এবং ওজন বৃদ্ধির মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
নারীর মানসিক স্বাস্থ্য- রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতা
রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা যা অনেকগুলি রাসায়নিক প্রক্রিয়াকে ব্যাখ্যা করতে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতাকে বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন এবং কার্বন ডাই অক্সাইডের ঘনত্ব ব্যাখ্যা করতে ব্যবহৃত হয়।
রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতার কারনে মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হয়। এর ফলে বর্তমান প্রজন্মের কমবেশি সবাই ‘ভাল্লাগে না’ রোগে আক্রান্ত।
নারীর মানসিক স্বাস্থ্য: বিষণ্ণতা
নারীদের মধ্যে বিষণ্ণতা বেশি দেখা যায়। এটি ধারণা করা হয় যে হরমোন, জীবনের অভিজ্ঞতা এবং সামাজিক চাপের কারণে এটি ঘটে।
নারীর মানসিক স্বাস্থ্য: উদ্বেগ
উদ্বেগ একটি সাধারণ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। এটি উদ্বেগ, ভয় এবং অস্থিরতার অনুভূতি দ্বারা চিহ্নিত। উদ্বেগ জীবনের সমস্ত দিককে প্রভাবিত করতে পারে, কাজ, সম্পর্ক এবং ব্যক্তিগত জীবন।
নারীদের মধ্যে উদ্বেগ বেশি দেখা যায়। এটি ধারণা করা হয় যে হরমোন, জীবনের অভিজ্ঞতা এবং সামাজিক চাপের কারণে এটি ঘটে।
উদ্বেগের সাথে মোকাবেলা করতে:
এখানে কিছু উপায় রয়েছে যা আপনাকে উদ্বেগের সাথে মোকাবেলা করতে সাহায্য করতে পারে:
- পুষ্টিকর খাবার খান এবং ব্যায়াম করুন।
- যথেষ্ট ঘুমান।
- চাপ পরিচালনা কৌশল শিখুন।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।
- বন্ধুবান্ধব অথবা পরিবারে যাকে ভালো লাগে তার সাথে সময় কাটান।
- আপনাকে আনন্দ দেয় এমন ক্রিয়াকলাপগুলিতে জড়িত হন।
নারীর মানসিক স্বাস্থ্য- ঘুম
নারীদের মধ্যে ঘুমের সমস্যা বেশি দেখা যায়। এটি ধারণা করা হয় যে হরমোন, জীবনের অভিজ্ঞতা এবং সামাজিক চাপের কারণে এটি ঘটে। নারীদের ঘুমের সমস্যার জন্য নারী মানসিক স্বাস্থ্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
ঘুমের সমস্যার জন্য কিছু সাধারণ কারণগুলি হল
- মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, যেমন বিষণ্ণতা, উদ্বেগ এবং চিন্তা।
- শারীরিক স্বাস্থ্য সমস্যা, যেমন ব্যথা, মেনোপজ এবং অনিদ্রা মেনোপজ এবং,শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা এবং অনিরাপদ ঘুমের পরিবেশ।
- জীবনের পরিবর্তন, যেমন নতুন চাকরি, সন্তানের জন্ম এবং বিবাহ।
- খারাপ ঘুমের অভ্যাস, যেমন অনিয়মিত ঘুমের সময়সূচী, দিনের বেলা ঘুমানো এবং কফি বা অ্যালকোহল পান করা।
- নিয়মিত ঘুমের অভ্যাস না থাকা।
- চাপ, যেমন কাজের চাপ, আর্থিক সমস্যা এবং সম্পর্ক সমস্যা।
- গর্ভধারণ এবং সন্তান প্রসবের সময় হরমোন পরিবর্তন।
- অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক।
- শারীরিক স্বাস্থ্য সমস্যা, যেমন যৌন সংক্রামিত রোগ (STIs).
- ঘুমের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
- ধূমপান এবং অ্যালকোহল পান।
- নিয়মিত ব্যায়াম না করা।
- অস্বস্তিকর বিছানা এবং ঘুমের পরিবেশ,ঘুমের জায়গায় শব্দ এবং আলোর উপস্থিতি,ঘুমের জায়গায় প্রাণী বা অন্যান্য বিরক্তিকর উপাদান।
ঘুমের সমস্যায় সমাধান
যদি আপনি ঘুমের সমস্যায় ভুগছেন, তাহলে কিছু জিনিস করার চেষ্টা করুন যা আপনাকে ভালভাবে ঘুমাতে সাহায্য করতে পারে:
- একটি নিয়মিত ঘুমের সময়সূচী তৈরি করুন যেটা সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও যেন বাদ না পরে যায়।
- একটি ঘুমের পরিবেশ তৈরি করুন যা অন্ধকার, শান্ত এবং শীতল।
- ঘুমাতে যাওয়ার আগে চা কফি এবং অ্যালকোহল পান করা এড়িয়ে চলুন।
- ঘুমাতে যাওয়ার আগে ব্যায়াম করুন, তবে অতিরিক্ত ব্যায়াম করবেন না।
- ঘুমাতে যাওয়ার আগে একটি শান্ত শোনার বা পড়ার অভ্যাস করুন।
- ঘুমাতে যাওয়ার আগে আপনার বিছানায় শুধুমাত্র ঘুমানোর জন্য ব্যবহার করুন।
- যদি আপনি ঘুমাতে না পারেন, তাহলে বিছানা থেকে উঠে কিছুক্ষণ অন্য কিছু করুন, যতক্ষণ না আপনি ঘুমাতে ইচ্ছুক বোধ করেন।
যদি আপনি ঘুমের সমস্যায় ভুগছেন এবং উপরের পদক্ষেপগুলি কাজ না করে, তাহলে একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। তারা আপনার ঘুমের সমস্যার কারণ নির্ণয় করতে এবং একটি চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করতে সহায়তা করতে পারে।
নারীর মানসিক স্বাস্থ্য: খাওয়ার ব্যাধি
খাওয়ার ব্যাধি হল মানসিক স্বাস্থ্যের একটি গুরুতর সমস্যা যার ফলে বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষের সামাজিক জীবন বিপন্ন হয়,। এটি একটি জটিল সমস্যা যা শারীরিক এবং মানসিক উভয় স্বাস্থ্যের উপরই প্রভাব ফেলতে পারে।
খাওয়ার ব্যাধিগুলি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার দিকে নিয়ে যেতে পারে, যেমন হাড়ের ভঙ্গুরতা, হৃদরোগ, কিডনি রোগ এবং প্রজনন সমস্যা। খাওয়ার ব্যাধিগুলিও আত্মহত্যার দিকে নিয়ে যেতে পারে।
খাওয়ার ব্যাধিগুলি সব বয়সের এবং সমস্ত সামাজিক-অর্থনৈতিক শ্রেণীর মানুষকে প্রভাবিত করতে পারে, তবে এগুলি প্রায়শই তরুণ মহিলাদের মধ্যে দেখা যায় বেশি। খাওয়ার ব্যাধিগুলির মধ্যে রয়েছে:
- খাওয়ার ব্যাধি ওভারইটিং ডিসঅর্ডার (BED): এটি একটি খাওয়ার ব্যাধি যা অনিয়ন্ত্রিত খাওয়ার পর অনুশোচনা এবং লজ্জার অনুভূতি দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।
- অ্যানোরেক্সিয়া নারভোসা: এটি একটি গুরুতর খাওয়ার ব্যাধি যা শরীরের ওজন অত্যধিক কমিয়ে ফেলার লক্ষ্য নিয়ে থাকে। অ্যানোরেক্সিকরা প্রায়শই তাদের শরীরের ওজন সম্পর্কে বিকৃত ধারণা রাখে এবং তারা বিশ্বাস করে যে তারা এখনও যথেষ্ট চর্বিযুক্ত। তারা খাওয়া এড়িয়ে চলতে পারে, অথবা তারা খুব অল্প পরিমাণে খাবার খেতে পারে। তারা অতিরিক্ত ব্যায়ামও করতে পারে।
- বিল্লিমিয়া নারভোসা: এটি একটি খাওয়ার ব্যাধি যা ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য বমি বমি ভাব বা অন্যান্য আচরণের উপর নির্ভর করে। বিল্লিমিকরা প্রায়শই খাবার খেয়ে তারপরে বমি করে দেয়। তারা অতিরিক্ত ব্যায়ামও করতে পারে।
- বিহারিয়ার খাওয়ার ব্যাধি: এটি একটি খাওয়ার ব্যাধি যা খাদ্যের সাথে অত্যধিক আচরণের দ্বারা চিহ্নিত। বিহারিকরা প্রায়শই খুব বেশি খায় এবং তারপরে নিজেদেরকে বমি করতে বা অন্ত্রের চলাচল করতে বা ওষুধ নিতে বা ক্র্যাশ ডায়েট করতে বা খুব বেশি ব্যায়াম করতে বাড়াতে পারে।
নারীর মানসিক স্বাস্থ্য:আত্মহত্যা
নারীদের মানসিক স্বাস্থ্য একটি আলোচনার বিষয় যা অবশ্যই গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত। আত্মহত্যার চিন্তাভাবনা বা আচরণ সমাজের জন্য জটিল সমস্যা যা যথাযথ চিকিৎসার প্রয়োজন।
আত্মহত্যার চিন্তাভাবনা বা আচরণের সাথে মোকাবিলা করার জন্য অনেক সংস্থান উপলব্ধ রয়েছে। তাছাড়া সবচেয়ে বড় কথা – নারীরা যদি স্বনির্ভর হয় তাহলে এ থেকে পরিত্রাণ করা সহজ হবে।
নারী মানসিক স্বাস্থ্য:মাদকাদ্রব্য বা অ্যালকোহল অপব্যবহার
মাদকাদ্রব্য বা অ্যালকোহল অপব্যবহার নারীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। এটি বিষণ্ণতা, উদ্বেগ এবং অন্যান্য মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার দিকে নিয়ে যেতে পারে। এটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার চিকিৎসাকেও কঠিন করে তুলতে পারে।
নারীর মানসিক স্বাস্থ্য: জীবনের ঘটনা
নারীদের মানসিক স্বাস্থ্যের জীবনের ঘটনাগুলো হলো সেই ঘটনাগুলো যা একজন মহিলার মানসিক স্বাস্থ্যতে দ্রুত পরিণত করতে পারে। এই ঘটনাগুলোর মধ্যে নারীদের মানসিক স্বাস্থ্যের জীবনের ঘটনার মধ্যে রয়েছে শারীরিক, মানসিক এবং পরিবেশগত কারণও আছে অনেক, যেমন:
- গর্ভধারণ এবং মাতৃত্ব
- যৌন নির্যাতন এবং যৌন হয়রানি
- শারীরিক নির্যাতন এবং মানসিক নির্যাতন
- আর্থিক সমস্যা
- কাজের চাপ
- সামাজিক বিচ্ছিন্নতা
- প্রিয়জনের মৃত্যু
- গুরুতর অসুস্থতা
- লিঙ্গ বৈষম্য
- সহিংসতা
- অবহেলা
- ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- একাকীত্ব
- বিচ্ছিন্নতা
উপরোক্ত ঘটনাগুলো একজন মহিলার মানসিক স্বাস্থ্যকে বিভিন্ন উপায়ে অবসাদ এবং উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, গর্ভধারণ এবং মাতৃত্ব একজন মহিলার হরমোনে পরিবর্তন আনতে পারে। যৌন নির্যাতন এবং যৌন হয়রানি একজন মহিলার আত্মবিশ্বাস এবং মূল্যবোধকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
শারীরিক নির্যাতন এবং মানসিক নির্যাতন একজন মহিলার আঘাত এবং ভয় সৃষ্টি করতে পারে। আর্থিক সমস্যা একজন মহিলার চাপ এবং উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে। কাজের চাপ একজন মহিলার চাপ এবং উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে।
সামাজিক বিচ্ছিন্নতা একজন মহিলার একাকীত্ব এবং বিচ্ছিন্নতা বোধ করতে পারে। প্রিয়জনের মৃত্যু একজন মহিলার শোক এবং দুঃখ সৃষ্টি করতে পারে। গুরুতর অসুস্থতা একজন মহিলার উদ্বেগ এবং ভয় সৃষ্টি করতে পারে।
কেন নারীর মানসিক স্বাস্থ্য এত গুরুত্বপূর্ণ?
অদৃশ্য যুদ্ধ এবং দৃশ্যমান যুদ্ধ উভয়ইই ধবংশ ডেকে আনে, কিন্তু অদৃশ্য যুদ্ধের খারাপ দিকগুলি প্রায়শই আরও দীর্ঘস্থায়ী হয়। কারণ অদৃশ্য যুদ্ধের মাধ্যমে মানসিক সমস্যাগুলি সরাসরি সংঘর্ষে জড়ায় না, তাই এই যুদ্ধে নারী মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতিটা হয় কল্পনাতিত।
এছাড়াও, অদৃশ্য যুদ্ধের বিস্তারগুলি সরাসরি দৃশ্যমান হয় না, তাই সেগুলিকে মোকাবেলা করা আরও কঠিন হয়ে পড়ে। নারী মানসিক স্বাস্থ্য অদৃশ্য যুদ্ধ এবং দৃশ্যমান যুদ্ধ উভয়ইইই পারিবারিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
তাই, এগুলিকে মোকাবেলা করার জন্য আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।প্রত্যেক মানসিক স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের উচিত কুসংস্কারগুলো দূর করে মানসিক সমস্যাগুলো নির্ণয় এবং তার চিকিৎসার ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য কিভাবে কাজ করে তা জানা। একমাত্র নারীরাই পারে একটা সুষ্ঠু সুন্দর পরিবার গড়ে তুলতে।

নারীর স্বাস্থ্য টিপস
নারীদের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি এই টিপসগুলি অনুসরণ করেন তাহলে আপনি সুস্থ ও সুখী জীবনযাপন করতে পারবেন।
- স্বাস্থ্যকর খাদ্য খান। আপনার খাদ্যতালিকায় প্রচুর ফল, শাকসবজি, whole grains এবং lean protein অন্তর্ভুক্ত করুন।
- পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করুন। প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস জল পান করুন।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন। সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি-তীব্রতার ব্যায়াম বা ৭৫ মিনিট উচ্চ-তীব্রতার ব্যায়াম করুন।
- পর্যাপ্ত ঘুম পান। প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি রাতে কমপক্ষে ৭-৮ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন।
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন। আপনার বয়স, স্বাস্থ্য এবং জীবনযাপনের উপর নির্ভর করে, আপনাকে প্রতি বছর বা তার বেশি ঘন ঘন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত।
- মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন। মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যাগুলিকে উপেক্ষা করবেন না। যদি আপনি বিষণ্ণতা, উদ্বেগ বা অন্য কোনও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন তবে সাহায্য চান।
- আপনার শরীরকে ভালবাসুন। আপনার শরীরকে যত্ন করুন এবং এটিকে সম্মান করুন।
- ধূমপান ও মদ্যপান এড়িয়ে চলুন। এগুলি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন। এটি আপনাকে যে কোনও অসুস্থতা শনাক্ত করতে এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ দেবে।
- মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকুন। মানসিক চাপ আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এটি আপনার হৃদয় ও রক্তনালীকে ক্ষতি করতে পারে এবং আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করতে পারে।
- সমাজিকীকরণ করুন। এটি আপনাকে সুখী ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখবে।
- সম্পর্ক গড়ে তুলুন। এটি আপনাকে সমর্থন ও ভালবাসা দেবে।
- নিজের যত্ন নিন। এটি আপনাকে সুস্থ ও সুখী রাখবে।
আমাদের কি করা উচিত
নারীদের মানসিক স্বাস্থ্য একটি গুরুতর বিষয়। এটি সমাধান করার জন্য আমাদের সকলের কাজ করতে হবে। নারীরা পুরুষদের তুলনায় মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলির চিকিৎসা করা সম্ভব।
আপনি একজন হোমিওপ্যাথি ডাক্তারের সাথে কথা বলতে পারেন বা একটি মানসিক স্বাস্থ্য ওয়েবসাইট পরিদর্শন করতে পারেন। আপনি আপনার মানসিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে পারেন এবং একটি সুখী এবং ফলপ্রসূ জীবনযাপন করতে পারেন।
প্রাথমিকভাবে নারীরা নিজেদের সম্পর্কে সচেতন হলেই মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে পারবেন। তবে দীর্ঘদিন মানসিক ডিপ্রেশন, অস্থিরতা, হতাশা, শারীরিক জটিলতা দেখা দিলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
নারীদের জীবনকে সুস্থ ও সুন্দর করে তুলতে অবশ্যই মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দিতে হবে। বর্তমান যান্ত্রিক জীবনে নিজের প্রতি উদাসীন হলে তা দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা তৈরি করতে পারে। ফলে নারীদের উচিত মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তৎপর ভূমিকা পালন করা।
জীবন চলার পথে উত্থান-পতন থাকবেই। সেসব সামলে চলাই হলো জীবন। কিন্তু খারাপ কিছুকে মেনে নিয়ে জীবনটাকে সুন্দর করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া, জীবনের খারাপ সময় ও খারাপ ঘটনাগুলো একটা দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলে যাওয়া।
উপসংহার
গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণত লিঙ্গ ভেদে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর মাঝে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। তাই মানসিক স্বাস্থ্যের মধ্যে লিঙ্গ পার্থক্যের কারণগুলো আবিষ্কার করলে, মানুষ ঠিকঠাকভাবে সতর্কতার সাথে সমস্যাগুলো নির্ণয় করবে ও উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা নিয়ে উপকৃত হবেন।
বিষণ্নতা, উদ্বেগ, ট্রমা, সাইকোসিস,আত্মহত্যার চিন্তাভাবনা বা আচরণ, বাইপোলার ডিজঅর্ডার, সিজোফ্রেনিয়া, প্রভৃতি সমস্যা হতে পারে। সাম্প্রতিক গবেষণার মাধ্যমে এটি স্পষ্ট করোনো মহামারী নারীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।
Read More:হোমিওপ্যাথিতে সাইকোসিস মায়াজম
পরিশেষে বলতে চাই
সবচেয়ে পরিচিত মানসিক স্বাস্থ্য অসুস্থতা হলো ডিপ্রেশন। পুরুষের তুলনায় দ্বিগুণ সংখ্যক নারী তাদের জীবনে কোনো না কোনো সময় এর সম্মুখীন হয়েছেন। লিঙ্গ, জেনেটিক্স, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পার্থক্য সব মিলিয়ে নারীর বিষণ্নতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
সবশেষে বলবো অবিশ্বাসী হন। সাহস রাখেন, নিজের জন্য কিছু সময় বের করুন। নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হন। মনে রাখবেন নিজে ভালো থাকলে আপনি আপনার পরিবারকে সুস্থ রাখতে পারবেন। পরিবার এবং চারপাশের পরিবেশ হলো আপনার পৃথিবী।
চেষ্টা করবেন একটা ভালো হোমিওপ্যাথি ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য। একমাত্র হোমিওপ্যাথিতে নারী মানসিক স্বাস্থ্য: অদৃশ্য যুদ্ধের বিপরীতে চিকিৎসা আছে। কারণ হোমিওপ্যাথিতে মনের চিকিৎসা গুরুত্বপূর্ণ। যে হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার যত রকম কায়দা করে মানসিক লক্ষণ নিতে পারবে তার রোগী তত দ্রুত ভালো হবে।
আমি আসলে চেষ্টা করেছি নারী মানসিক স্বাস্থ্য: অদৃশ্য যুদ্ধের বিপরীতে লেখাটি সহজে আপনাদেরকে বুঝাতে। আমার এই ব্লগ যদি আপনাদের কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানান অথবা যে টপিক সম্পর্কে জানতে চান অনুগ্রহপূর্বক আমাকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন সোশ্যাল মিডিয়াতে অথবা আমার পেজে।
আমি চেষ্টা করব আপনাদের মনের মত করে উত্তর দেওয়ার জন্য।নিয়মিত আরো বিভিন্ন বিষয়ে আর্টিকেলগুলো পেতে হলে অবশ্যই আমার ওয়েবসাইটে ভিজিট করবেন। ধৈর্য ধরে এতক্ষণ আমার সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ!
Resources: