টিউবারকুলার মায়াজম: এ মায়াজমের রোগীর পারিবারিক ইতিহাসে যক্ষা রোগের ইতিহাস থাকবে, বাবা বংশে অথবা মার বংশে।এ মায়াজমের রোগীরা সাধারণত শারীরিকভাবে খুব দুর্বল কিন্তু মানসিকভাবে স্বাভাবিক।
কোন কারণ ছাড়াই অল্পতেই ঠান্ডায় আক্রান্ত হয় এবং সর্দি লাগলেই কাশি হয়, সেটা কিছুতেই নিরাময় হতে চায় না। সঠিক চিকিৎসা না পেলে এই রোগী দিন দিন শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ক্ষয় রোগে আক্রান্ত হয়ে দুর্বল হয়ে যায়। আসুন প্রথমেই জেনে নেই –

টিউবারকুলার মায়াজম কি?
টিউবারকুলার মায়াজম বলতে বোঝায় মায়াজমের মিশ্রণ। যেমন: সোরা এবং সিফিলিটিক মায়াজমের মিশ্রণ আথবা সোরা ও সাইকোসিসের মিশ্রণ।ফুসফুস, মস্তিষ্ক, কিডনি, পাকস্থলী বা লিভারে লক্ষণগুলি এক অঙ্গ থেকে অন্য অঙ্গে পরিবর্তিত হতে থাকে।
টিউবারকুলার রোগী দেখতে কেমন?
এর শারীরিক অবয়ব – টিউবারকুলার রোগীর চুলগুলি ফাটা ফাটা, রুক্ষ্ম, কর্কশ এবং জটা বাঁধা। দাদ জাতীয় চর্মরোগ। চোখ দুটি কোটরাগত, মুখটি বিবর্ণ ও মলিন এবং গাল দুটি ইষৎ আরক্তিম।
গাল দুটির এই আরক্তিমতা সাধারণত: বিকালের দিকে জ্বর অবস্থায়, সর্দি কাসির আক্রমণের সময়, শিশুদের দন্তোৎগমের সময় এবং ক্রিমি লক্ষণের সহিত বিশেষ ভাবে বিকশিত হয়।
সোরা রোগীর ন্যায় টিউবারকুলার রোগীর ঠোঁট দুটিও লাল বর্ণ ধারণ করে এবং কখনও কখনও ঐ আরক্তিমতার সহিত ঠোঁট দুটি শুষ্ক হতেও দেখা যায়।
প্রাত:কালে নিদ্রা ভঙ্গের পর সমগ্র মুখমন্ডলটি (অর্থাৎ চোখ, নাক, ঠোঁট সর্বত্রই) একটি ফুলো ফুলো বা ফেঁসো ফেঁসো ভাব টিউবারকুলার রোগীতে পরিলক্ষিত হয়। এ রোগীর একটি গাল ঠান্ডা ও অপরটি গরম।
উপরোক্ত লক্ষণগুলির সহিত একটি ফুটফুটে ভাবসহ শরীরের অন্যান্য স্থানে শুষ্কতা ও শীর্ণতা বিশেষভাবে বর্তমান থাকে। মুখমন্ডলে একের পর এক ছোট ছোট যন্ত্রণাদায়ক স্ফোটক বা ব্রণ টিউবারকুলার রোগের পরিচয়। দেহের উপর একটি ক্রমিক শীর্ণতা ও শুষ্কতার ভাব পরিস্ফুট থাকে।
হোমিওপ্যাথি টিউবারকুলার মায়াজম
এই ক্রমিক শীর্ণতার কারণটিও জেনে রাখা দরকার। আমরা জানি, যে সমস্ত খাদ্যদ্রব্য আমরা গ্রহণ করি সে সমস্ত খাদ্যদ্রব্য হতে সারাংশ গ্রহণ করবার জন্য একটি শক্তি আমাদের দেহাভ্যন্তরে বর্তমান থাকে কিন্তু টিউবারকুলার রোগীর শরীরের ঐ শক্তিটি নষ্ট হয়ে যায়।
যার ফলে টিউবারকুলার রোগী যতই মানসম্পন্ন খাদ্য আহার করুকনা কেন রোগীর শরীর এ খাদ্যমান বা খাদ্যের সারাংশ গ্রহণ করতে পারেনা, রোগী শীর্ণই থেকে যায়।
অপরদিকে শরীরের শুষ্কতা যতই বৃদ্ধি পেতে থাকে শরীরস্থ গ্ল্যান্ডসমূহও ততই বড় হতে থাকে। রোগীর ক্ষুধার যথেষ্ট আবির্ভাব হয় কিন্তু খাদ্যবস্তুর সারাংশ গ্রহণের শক্তিটির অভাব হেতু প্রচুর আহার সত্ত্বেও রোগীর শুষ্কতার কোন উন্নতি হয়না। গোদুগ্ধ টিউবারকুলার রোগী হজম করতে পারেনা। শারীরিক পরিশ্রমের অক্ষমতা টিউবারকুলার রোগের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
টিউবারকুলার মায়াজম মানসিক লক্ষণ(Mental symptoms):
As are the will and understanding, so will be the external of man. As the life of man or as the will of man, so is the body of man. – kent- lec- 19
রাত্রিকালে, স্পর্শে, রোগের কথা চিন্তা করলে, জামা কাপড় ছাড়বার পর, শয্যাতাপে এবং চুলকাবার পর টিউবারকুলার চর্ম রোগের বৃদ্ধি এবং ঠান্ডায় উপশম হয়। শুষ্ক আবহাওয়ায় ও মুক্ত বাতাসে টিউবারকুলার রোগীর রোগের উপশম হয়।
টিউবারকুলার মায়াজমের হ্রাস – বৃদ্ধি
হোমিওপ্যাথি টিউবারকুলার মায়াজম রোগের বৃদ্ধিটি ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে হ্রাস পায় কিন্তু ঝড়বৃষ্টির দিনে বৃদ্ধি পায়। সর্বক্ষেত্রেই পরিবর্তনশীলতা টিউবারকুলার রোগীর একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। হ্রাসবৃদ্ধির ক্ষেত্রেও ঐ একই কথা প্রযোজ্য।
রোগী হয়ত কিছুক্ষণ মুক্ত বাতাসে ঘুরে বেড়াতে ইচ্ছে করল কিন্তু দেখা গেল তা সহ্য হলো না সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হলো, ভাবল তাহলে গৃহাভ্যন্তরে বা বদ্ধ ঘরে যাওয়াটাই উত্তম, গৃহাভ্যন্তরে বা বদ্ধ ঘরে গেল, দেখা গেল সেখানে যাবার পর তার নাক দুটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
শান্তির আশায় আবার খোলা বাতাসে এলো, আবার সেই সর্দিকাশি শুরু হলো, কি করলে, কি পেলে, কি খেলে একটু শান্তি পাওয়া যায়, শুধু ওই চিন্তাই কাজ করে এবং এ জন্যই ঘন ঘন মত ও পথের পরিবর্তন করতে সে বাধ্য হয়।
আবার হয়ত ভাবল এই খাদ্যটি খেলে তার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হবে এবং খাদ্যটি খাওয়াও শুরু করল কিন্তু দিন কতেক খেয়েই ও ফলাফল না দেখেই অন্য আর এক খাদ্য বস্তুতে আকৃষ্ট হয়ে পড়ল এবং অবশেষে রোগীর মানসিক অবস্থাটি একটি বিরক্তি ও বিষণ্ণতায় পর্যবসিত হলো।
Read More:খাদ্যের মধ্যে ঔষধ
কিন্তু এ বিষণ্ণতায় নৈরাশ্য কিংবা উৎকন্ঠা আসেনা বরং সে আশাবাদী। টিউবারকুলার রোগীর মানসিক অবস্থা এমনই যে, জীবনে যা কিছুই ঘটুক উৎকন্ঠার লেশ মাত্র তার মধ্যে নেই, কোন কিছুতেই কোন গ্রাহ্য নেই।
যেমন: পায়ু পথ দিয়ে বা নাক দিয়ে রক্তস্রাব, কাশতে কাশতে রক্ত বমন, এ প্রকার রোগাবস্থার পরিণতি যে ভয়াবহ তা সকলেরই জানা কিন্তু টিউবারকুলার রোগীর এ অবস্থা ঘটলেও রোগী নির্বিকার, কোন উৎকন্ঠা, ভয় বা ভীতি তার মধ্যে পরিলক্ষিত হয়না।
এ রকম মরনোম্মুখ অবস্থাতেও টিউবারকুলার রোগী একেবারই চিন্তা শূন্য, উদাসীন। উপরোক্ত মানসিক অবস্থাসমূহ টিউবারকুলার রোগীর দেহের যন্ত্রসমূহের উপর প্রতিফলিত হয় এবং প্রতিফলনজনিত যে লক্ষণ সে সমস্ত লক্ষণসমূহই হচ্ছে টিউবারকুলার রোগীর শারীরিক লক্ষণ বা বস্তুগত লক্ষণ।
Resources:
2 thoughts on “টিউবারকুলার মায়াজম”
Comments are closed.