হিপার সালফার হোমিও ঔষধ-পুরা নাম হিপার সালফিউরিস ক্যাল্কেরিয়াম।
সমনাম- ক্যালসিয়াম সালফেট, সালফেট অব লাইম,লিভার অব সালফার, হিপার সালফিউরিস ক্যাল্কেরিয়াম,হিপার সালফার।

হিপার সালফার হোমিও ঔষধ এর মূল কথা
হিপার সালফ এর রোগী অত্যন্ত শীতকাতর এবং অত্যন্ত স্পর্শকাতর -শারীরিক ও মানসিক উভয় দিক হতে। এত শীতকাতর, এত স্পর্শকাতর যে আক্রান্ত অঙ্গ ছুঁতে দেয় না। অস্ত্র প্রচারের নামে সে মূর্ছা যায়। গোঁজ ফুটে থাকার মতো বেদনা। গরম ঘরে আরাম কিন্তু দাঁতের বেদনা লক্ষণ হিপার সালফারের গরম ঘরে বৃদ্ধি। সামান্য আঘাতে পুঁজ উৎপত্তি। এটিই প্রধান লক্ষণ হিপার সালফ এর।
সহজেই ঘর্মস্রাব হয় এবং ঘাম থাকা সত্ত্বেও আবরণ দিয়ে ঢেকে রাখে নিজেকে (সরিনাম)। গায়ের ঢাকা সে খুলতে চায় না। সামান্য শীতে বা উন্মুক্ত বাতাসে সর্দি লাগে (টিউবার) বা ঠান্ডা জিনিস খেলেই বা আক্রান্ত অঙ্গ আবরণের বাহিরে রাখলেই কাশি বা রোগ এর বৃদ্ধি।
Read More:হোমিওপ্যাথি টিউবারকুলার মায়াজম
সব সময় অপরের দোষ খোজায় ব্যস্ত এবং কলহ করিবার জন্য একেবারে প্রস্তুত হয়ে থাকে। অনেক সময় সামান্য কারনে ক্রোধের পরিবর্তে কাঁদিতে দেখা যায়।
কমননাম- সালফুরেট অফ লাইম, হ্যানিম্যান ক্যালসিয়াম সালফাইড।
প্রূভার- হ্যানিম্যান
উৎস- রাসায়নিক।
মায়াজম – সোরিক, সাইকোটিক, সিফিলিটিক, টিউবারকুলার
কাতরতা- শীতকাতর
হিপার সালফ প্রস্তুত প্রনালী
ঝিনুকের সাদা অংশ পুড়িয়ে গন্ধক বা সালফার সহযোগে হিপার সালফ তৈরি হয়। অর্থাৎ ক্যালসিয়াম সালফাইড চূর্ণও গন্ধক এ দুটি দ্রব্যের রাসায়নিক সংযোগে এটি তৈরি হয়।
কারণ-চর্মরোগ চাপা পড়া, মার্কারীর অপব্যবহার (সিঙ্কোনা), সিফিলিস রোগ চিকিৎসায় বহু প্রচলিত ঔষধ ব্যবহারের কুফল, অনেক এন্টিবায়োটিক খাওয়ার কুফল।
ক্রিয়াস্থল– শ্বাস-প্রশ্বাস যন্ত্রের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী উপর, লিম্ফ্যাক্টিক নার্ভ সমূহ, টিস্যু সমূহ, গ্ল্যান্ড, কিডনী, চর্ম নাকের গোড়া – নাকের হাড়। অস্বাস্থ্যকর চর্ম সুন্দরী ও অলস চরিত্রের এবং পেশীসমূহ দুর্বল ব্যক্তি। স্ক্রফিউলাস ও শ্লেষ্মা প্রধান ধাতুগ্রস্ত ব্যক্তি যাদের উদ্ভেদসমূহ ও প্রন্থিজ স্ফীতি হবার প্রবণতা দেখা যায় তাদের ক্ষেত্রে হিপার সালফ ভালো কাজ করে।
মন- সন্ধ্যায় ও রাত্রে অত্যন্ত মনকষ্ট তৎসহ আত্মহত্যার চিন্তা, সামান্য কারণে খিটখিটে হয়ে ওঠে, অবসাদগ্রস্ত ও দুঃখিত, হিংস্র প্রকৃতির ও দ্রুত কথা বলে, সেনসিটিভ, বেয়াদব ভুলোমনা, হতাসাগ্রস্থ, ঝগড়াতে, উত্তেজিত হয় সহজেই, সকল প্রকার অনুভব বিষয়ে অতি অনুভূতি প্রবণতা, দৈহিক ও মানসিক দিক দিয়ে অসহিষ্ণুতা।
অনুভূতি – শরীরে কোন অংশের উপর দিয়ে বায়ু প্রবাহ বয়ে চলছে এই জাতীয় অনুভূতি।রোগী এত রাগী যে, সামান্য কারণে অতি ক্রোধ রাগে সে ঘরে আগুন দিতে চায়, বসকে ছুরি বসাতে চায় এই হিপার সালফার হোমিও ঔষধ।
খাদ্য ইচছা- টক, ঝাল,আচার, ভিনেগার, চাটনি, উগ্র দ্রব্য খাবার ইচ্ছা।
খাদ্য অনিচ্ছা- চর্বি জাতীয় খাবার।

হিপার সালফার এর কাজ কি
মাথা- মাথা ঘোরা ও মাথা ব্যথা, মাথা নাড়ালে ও গাড়িতে চড়লে। প্রতিদিন সকালে নাকের গোড়ায় ও ডান দিকের রগে, ছিদ্র করার মত বেদনা। মাথার চামড়া অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও টাটানি ব্যথা। মাথায় আর্দ্র ঘা তৎসহ চুলকানি ও জ্বালা। মাথার উপর ঠান্ডা ঘাম।
চোখ- চোখ কর্নিয়ার ক্ষত। আইরাইটিস তৎসহ অ্যান্টিরিয়র চেম্বারে পুঁজ। পুঁজযুক্ত কনজাংটিভাইটিস তৎসহ সুস্পষ্ট কেমোসিস, চোখের ভিতরে বেদনা যেন চোখগুলি মাথার পিছনের দিকে টেনে ধরা হচ্ছে। দৃষ্টবস্তু লাল অধিক বড় দেখায়। পড়ার সময় দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে উঠে। দৃষ্টির সময় কমে অর্ধেক হয়ে যায়। চোখের সামনে উজ্জ্বল চক্র সমূহ দেখে। ‘হাইপোপিয়ন’
কান- কানের পিছনের অংশে মামড়ি,কানের ভিতর সাঁই সাঁই শব্দ ও দপদপানী তৎসহ শুনতে কষ্ট হয়। স্কারলেট জ্বরের পরে বধীরতা। কর্ণনলিতে পুঁজযুক্ত ফুস্কুড়ি।ম্যাস্টয়েড অ্যান্ট্রামের প্রদাহ।
নাক – নাকের ছিদ্রে ক্ষততা, রোগী এত স্পর্শকাতর যে, শুষ্ক ঠান্ডা বাতাসে যখনি রোগী যায় তখনই হাঁচি শুরু হয়,তৎসহ নাক দিয়ে পাতলা সর্দি স্রাব। দুর্গন্ধযুক্ত সর্দি স্রাব। যতবার রোগী ঠান্ডা বাতাসে যায় তত বার নাক বন্ধ হয়ে যায়। বাসি পনিরের মতো সর্দির গন্ধ। হে ফেভার।
মুখমণ্ডল- মুখমণ্ডল হলুদ বর্ণ। নিচের ঠোঁটের মাঝখানে ফাটা। ফোস্কাযুক্ত ইরিসিপেলাস,তৎসহ আক্রান্ত অংশ কিছুফোঁটার মতো বেদনা। ডান দিকের মুখমন্ডলের স্নায়ুশূল। বেদনা রগ, কান, নাসাপক্ষ ও ঠোঁট পর্যন্ত প্রসারিত হয়।মুখমণ্ডলের অস্থিতে বেদনা, বিশেষত্ব স্পর্শ করলে। মুখের কোনসমূহে ক্ষত। মুখ খোলার সময় চোয়ালে তীর বিদ্ধবৎ বেদনা।
গলা- ঢোক গালার সময় মনে হয় যেন গলার ভিতর গোঁজ ফুঁটে রয়েছে এই জাতীয় অনুভূতি সূচীবিদ্ধবৎ বেদনা। বেদনা কান পর্যন্ত প্রসারিত হয়। গলা খাঁকারি দিলে শ্লেষ্মা উঠে।
পাকস্থলী – পাকস্থলীর স্ফীতি, স্বাদ এবং গন্ধবিহীন পুনঃ পুনঃ ঢেকুর। পাকস্থলীর স্ফীতি এত যে,কাপড় ঢিলা করে দিতে বাধ্য হয়। স্পর্শ সহ্য হয় না। সামান্য পরিমাণ আহারের পরে পাকস্থলীতে ভারবোধ ও চাপবোধ।
উদর – উদর বমন করার সময়, কাশির সময় শ্বাস নেওয়ার সময় অথবা স্পর্শ করলে যকৃত স্থানে সূচীবিদ্ধবৎ বেদনা। (ব্রায়োনিয়া, মার্কসল)।
মল – মল নরম ও কাদার মতো রং। মল টক গন্ধযুক্ত সাদাবর্ণ, অজীর্ণ খাদ্যবস্তুযুক্ত ও দুর্গন্ধযুক্ত। এমনকি নরম মলও কোঁথ দিয়ে বার করার মত ক্ষমতাটুকু থাকেনা।
প্রস্রাব – মন্থর গতিতে প্রস্রাব। শক্তি প্রয়োগ ছাড়াই ফোঁটা ফোঁটা করে প্রস্রাব।প্রস্রাব থলীর দুর্বলতা। সর্বদা মনে হয় কিছুটা প্রস্রাব রয়ে গেল। প্রস্রাবে চর্বির মতো দানা।
পুরুষের রোগ – হার্পিস,অনুভূতি প্রবণ, সহজেই রক্তপাত হয়।লিঙ্গের অগ্রভাগের চামড়ায় ক্ষত, অনেকটা সিফিলিসের মতো।কাম বা প্রেম সম্পর্কিত কাল্পনিক ইচ্ছা ভিন্ন লিঙ্গোদ্রেকো ও বীর্যপাত। চুলকানি গ্রন্থীসমূহে পুঁজ উৎপত্তি। দুর্গন্ধযুক্ত ডুমুরের মতো আঁচিল। যৌনাঙ্গের মধ্যবর্তী স্থানে আর্দ্র ক্ষতসমূহ। সহজে আরোগ্য হতে চায় না এই জাতীয় গনোরিয়া রোগ।
স্ত্রী রোগ – জরায়ু থেকে রক্তস্রাব। যৌনাঙ্গ ও স্তনের বোটায় চুলকানি, ঋতুকালে বৃদ্ধি, ঋতুস্রাব দেরীতে ও অল্প পরিমাণে হয়।ভ্যাজাইনাতে ফোড়া অত্যন্ত স্পর্শকাতর হয়।তীব্র দূর্গন্ধযুক্ত প্রদর স্রাব। বাসি পনিরের মতো দুর্গন্ধযুক্ত (স্যানিকিউলা)। বয়সন্ধি কালে প্রচুর ঘর্ম স্রাব (টিলিয়া, জ্যাবোরেন্ডী)।
Read More:হোমিও ঔষধের নামের তালিকা ও কাজ
শ্বাস প্রশ্বাস যন্ত্রসমূহ– শুষ্ক ঠান্ডা বাতাসের মধ্যে থাকলে স্বরভঙ্গ তৎসহ কণ্ঠস্বরের বিলুপ্তি। ভ্রমণ কালে কষ্টকর কাশি। সামান্য শীতে বা উন্মুক্ত বাতাসে সর্দি লাগে (টিউবার) বা ঠান্ডা জিনিস খেলেই বা আক্রান্ত অঙ্গ আবরণের বাহিরে রাখলেই কাশি বৃদ্ধি।উদ্রেগপূর্ণ সাঁই সাঁই শব্দ যুক্ত শ্বাসকষ্ট।আর্দ্রতাযুক্ত শ্বাস প্রশ্বাস। হাঁপানি শুষ্ক ঠান্ডা বাতাসে, ভিজে স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় বৃদ্ধি। হৃদকম্প।
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ – সামান্য চাপে পায়ের বুড়ো আঙ্গুলের নখে তীব্র বেদনা হোমিওপ্যাথি ঔষধ হিপার সালফিউরিস।
হিপার সালফার হোমিও ঔষধের চামড়া
অ্যালার্জি ও নিউরোটিক ঈডিমা। সহজেই ঘর্মস্রাব হয় এবং ঘাম থাকা সত্ত্বেও গায়ের ঢাকা সে খুলতে চায় না। ক্ষত সমূহ ঠান্ডা অত্যন্ত স্পর্শকাতর। চামড়া ফাটাফাটা তৎসহ হাত ও পায়ে গভীরভাবে ফাটা।সামান্য আঘাতে পুঁজ উৎপত্তি।
এত স্পর্শকাতর যে আক্রান্ত অঙ্গ ছুঁতে দেয় না।পচা ক্ষতসমূহ, চারদিক থেকে ছোট ছোট ফুস্কুড়ি ক্ষতস্থান ঢেকে ফেলে। পুরাতন ও পুনঃ পুনঃ প্রকাশিত হওয়া আমবাতসমূহ স্মলপক্স। হার্পিস, অবিরাম শরীর থেকে দূর্গন্ধ বেরিয়ে থাকে এই হোমিওপ্যাথি ঔষধ হিপার সালফিউরিস।
বৃদ্ধি -ঠান্ডা বাতাসে, সামান্য বায়ু প্রবাহে, পারদ ব্যবহারে,স্পর্শে, বেদনাদায়ক দিক চেপে শুলে।
উপশম -ভিজে স্যাঁতস্যাতে আবহাওয়া, মাথা ভালো করে ঢেকে রাখলে, উষ্ণতায়, আহারের পরে।
আশা করছি আপনারা হোমিওপ্যাথি ঔষধ হিপার সালফিউরিস ঔষধটি পড়ে উপকৃত হবেন।
সিটি হোমিও
রূপায়ন মিলেনিয়াম স্কয়ার,দোকান নং-116
( গ্রাউন্ড ফ্লোর) -70, 70/Aপ্রগতি শরণি,
উত্তর বাড্ডা, ঢাকা 1212,বাংলাদেশ।
01736181642