কিভাবে ম্যাটেরিয়া মেডিকা অধ্যয়ন করতে হয়? ম্যাটেরিয়া মেডিকা হল হোমিওপ্যাথির ঔষধগুলির একটি রেফারেন্স বই। এটি বিভিন্ন ঔষধের বৈশিষ্ট্য এবং তাদের ব্যবহারের নির্দেশাবলী বর্ণনা করে। ম্যাটেরিয়া মেডিকা অধ্যয়ন করা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা অনুশীলনের জন্য অপরিহার্য।
প্রতিনিয়তই আমরা এ বিষয়ে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হই। হোমিওপ্যাথিক ম্যাটেরিয়া মেডিকা একটি বৃহৎ ও জটিল বিষয় কারণ এক একটি ঔষধ হাজার হাজার লক্ষণের সমষ্টি।এ কারণে সেটি অধ্যয়ন করে আয়ত্তের করা সহজ কাজ নয়। তাই দেখা যায় প্রতিনিয়তই আমরা এ বিষয়ে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হই। যে সমস্ত প্রশ্নের সম্মুখীন হই সেগুলি হচ্ছে ম্যাটেরিয়া মেডিকা কিভাবে পড়ব? ম্যাটেরিয়া মেডিকা আয়ত্তের কৌশল কি? ঔষধ কিভাবে পড়তে হয়? ইত্যাদি।
এ প্রশ্নগুলি যে শুধুমাত্র তরুণ হোমিওপ্যাথি শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকদের কাছ থেকেই আসে তা নয়, দীর্ঘদিন যাবৎ চিকিৎসা কার্যে নিয়োজিত অনেক পুরাতন হোমিওপ্যাথদের কাছ থেকেও আসে। মনে রাখতে হবে যে, প্রতিটি কাজ যত কঠিনই হোকনা কেন তা অধিকতর সহজে ও নিখূঁতভাবে সমাধা করার জন্য কিছু কৌশল অবশ্যই থাকে যা আয়ত্ত করতে পারলে তখন আর ঐ কাজটি সমাধা করতে তেমন কোন বেগ পেতে হয় না। ঠিক তেমনি ম্যাটেরিয়া মেডিকা অধ্যয়ন করে তা আয়ত্ত করারও কিছু কৌশল আছে যা চিকিৎসা কার্যে প্রবেশের আগেই জেনে নিতে হয়।
Read More:ঔষধ নির্বাচন কৌশল
চিকিৎসা কার্যে প্রবেশের আগেই জেনে নিতে না পারলে পরবর্তীতে জানা আর সহজ হয়না। ফলে রোগী চিকিৎসার প্রতিটি ক্ষেত্রেই চিকিৎসককে নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়। মনে রাখতে হবে যে, ম্যাটেরিয়া মেডিকা আয়ত্তের পূর্ব শর্ত হচ্ছে ঔষধ অধ্যয়ন শুরু করার আগে রোগ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে হবে। রোগগুলি সম্পর্কে কিভাবে এবং কোথা থেকে জানব?এ রোগগুলি সমম্পর্কে জানতে হলে প্রথমে হ্যানিম্যান তাঁর ক্রনিক ডিজিজ গ্রন্থে যে সমস্ত লক্ষণগুলিকে সোরিক, যেগুলিকে সাইকোটিক এবং যেগুলিকে সিফিলিটিক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন সেগুলিকে আলাদা আলাদাভাবে অধ্যয়ন করে আগে পরিপূর্ণভাবে আয়ত্ত করতে হবে এবং তারপর আমাদের কাছে চিকিৎসা প্রার্থী হয়ে যে সমস্ত রোগীগুলি আসবে তাদের লক্ষণসমষ্টি হতে আরো বিশালভাবে জানা যাবে।

আমাদের অবশ্যই জানা থতাকতে হবে যে, হ্যানিম্যানের ক্রনিক ডিজিজ গ্রন্থটিই হচ্ছে হোমিওপ্যাথির সর্বশ্রেষ্ঠ প্র্যাকটিস অফ মেডিসিন। রোগের উপরে জ্ঞানার্জন যত বেশী হবে ম্যাটেরিয়া মেডিকা আয়ত্ত করা তত সহজ হবে, অপর পক্ষে রোগের উপরে জ্ঞানার্জন যত কম হবে ম্যাটেরিয়া মেডিকা আয়ত্ত করা তত কঠিন হবে।
সোরিক,সিফিলিটিক ও সাইকোটিক রোগীর কিংবা ঔষধের মানসিক, সার্বদেদৈহিক ও আঙ্গিক লক্ষণগুলি জানতে হলে আগে যথাক্রমে সোরা, সিফিলিস ও সাইকোসিস নামক মায়াজমেটিক ক্রনিক রোগগুলির মানসিক, সার্বদৈহিক ও আঙ্গিক লক্ষণগুলি পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে জানতে হবে। ক্রনিক রোগের উপর পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জিত হলে একিউট রোগের উপর জ্ঞান স্বয়ংক্রিয় ভাবেই অর্জিত হয়ে যায় কারণ একিউট রোগ হচ্ছে ক্রনিক রোগেরই সাময়িক উচ্ছ্বাস মাত্র। ঔষধ অধ্যয়ন করবার সময় মনে রাখতে হবে যে, আমি যে ঔষধটি অধ্যয়ন করতেছি তার লক্ষণ অধ্যয়ন করতেছিনা,আমি আমার হৃদয়পটে ঐ ঔষধের একটি চিত্র অংকন করতেছি।
অনুরূপভাবে, রোগ অধ্যয়নের সময়ও মনে রাখতে হবে যে, আমি একটি রোগের লক্ষণ অধ্যয়ন করতেছিনা, রোগের একটি চিত্র আমার হৃদয়পটে অংকন করতেছি। প্রত্যেকটি ঔষধ প্রথমে আলাদা আলাদাভাবে বিস্তারিত অধ্যয়ন করতে হবে এবং তারপর তুলনামূলক অধ্যয়ন করতে হবে। একজন চিকিৎসক প্রত্যেকটি ঔষধ বিস্তারিত ভাবে অধ্যয়ন করে যখন ঔষধের ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের দ্বারা একটি ঔষধকে অন্য সকল ঔষধ থেকে সহজেই আলাদা করতে পারবেন তখনই তিনি বুঝতে পারবেন যে ঔষধ সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের বা ম্যাটেরিয়া মেডিকা অধ্যয়নের যোগ্যতা তাঁর মধ্যে এসে গেছে। ম্যাটেরিয়া মেডিকা অধ্যয়নের এটাই হচ্ছে শ্রেষ্ঠতম পন্থা এবং যখন এ পন্থা অনুসরণ করা হয় তখন চিকিৎসক বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণ হন এবং আশ্চর্যজনক নির্ভুলতার সাথে ম্যাটেরিয়া মেডিকা প্রয়োগ করতে পারেন। এটাই ছিল হ্যানিম্যানের পদ্ধতি।
রোগী আরোগ্যের মূল চাবিকাঠি হচ্ছে, মেটেরিয়া মেডিকার ঔষধের জ্ঞান। এজন্যে নিয়মিতভাবে ও বার বার মেটেরিয়া মেডিকা পড়ে ঔষধ চিত্র আয়ত্ত করতে হবে। আর সঠিকভাবে রোগী পর্যবেক্ষণের পর সুনির্বাচিত ঔষধ প্রয়োগ করে রোগীকে আরোগ্য করাকেই জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। একটি ঔষধ কোথা হতে আসলো, উৎস কি,কোন মায়াজম, কাতরতা, কারণ, প্রবণতা, ক্রিয়াস্থল, কোন কোন রোগে কাজ করে, নির্দেশক লক্ষণ, মানসিক লক্ষণ, ইচ্ছা-অনিচ্ছা, হ্রাস – বৃদ্ধি ইত্যাদি আয়ত্ত করতে হবে।
ম্যাটেরিয়া মেডিকা অধ্যয়নের জন্য এখানে কিছু টিপস রয়েছে:
- একটি ভাল ম্যাটেরিয়া মেডিকা বই নির্বাচন করুন। অনেকগুলি ভিন্ন ম্যাটেরিয়া মেডিকা বই পাওয়া যায়, তাই আপনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত বইটি খুঁজে বের করা গুরুত্বপূর্ণ। কিছু জনপ্রিয় ম্যাটেরিয়া মেডিকা বই হল “The Materia Medica of the Homeopathic Pharmacopeia of the United States” (এইচএমপি) এবং “The Materia Medica of William Boericke”।
- ম্যাটেরিয়া মেডিকার প্রতিটি ঔষধ পড়ুন। ম্যাটেরিয়া মেডিকা প্রতিটি ঔষধের একটি বিশদ বিবরণ প্রদান করে, যার মধ্যে রয়েছে এর বৈশিষ্ট্য, লক্ষণ এবং ব্যবহারের নির্দেশাবলী। প্রতিটি ঔষধ পড়ুন যাতে আপনি এর বৈশিষ্ট্যগুলি বুঝতে পারেন এবং এটি কীভাবে বিভিন্ন অবস্থার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
- ম্যাটেরিয়া মেডিকার প্রতিটি ঔষধের লক্ষণগুলির সাথে পরিচিত হন। ম্যাটেরিয়া মেডিকা প্রতিটি ঔষধের লক্ষণগুলির একটি বিশদ বিবরণ প্রদান করে। এই লক্ষণগুলি সম্পর্কে জানা গুরুত্বপূর্ণ যাতে আপনি আপনার রোগীদের জন্য সঠিক ঔষধগুলি নির্বাচন করতে পারেন।
- ম্যাটেরিয়া মেডিকার প্রতিটি ঔষধের ব্যবহারের নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন। ম্যাটেরিয়া মেডিকা প্রতিটি ঔষধের জন্য একটি নির্দিষ্ট ব্যবহারের নির্দেশাবলী প্রদান করে। এই নির্দেশাবলী অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ যাতে আপনার রোগীরা নিরাপদে এবং কার্যকরভাবে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ ব্যবহার করতে পারে।

ম্যাটেরিয়া মেডিকা অধ্যয়ন একটি সময়সাপেক্ষ এবং কঠোর প্রক্রিয়া হতে পারে, তবে এটি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা অনুশীলনের জন্য অপরিহার্য। ধৈর্য ধরুন এবং প্রতিটি ঔষধের বৈশিষ্ট্য এবং ব্যবহারের নির্দেশাবলীগুলি বুঝতে মনোনিবেশ করুন। এখানে ম্যাটেরিয়া মেডিকা অধ্যয়নের জন্য কিছু অতিরিক্ত টিপস রয়েছে:
- একটি ম্যাটেরিয়া মেডিকা ক্লাসে অংশগ্রহণ করুন। একজন অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথের কাছ থেকে ম্যাটেরিয়া মেডিকা শেখার মাধ্যমে আপনি আপনার বোঝাপড়া উন্নত করতে পারেন।
- ম্যাটেরিয়া মেডিকা উপর একটি টেস্টিং সিস্টেম ব্যবহার করুন। ম্যাটেরিয়া মেডিকা উপর একটি টেস্টিং সিস্টেম ব্যবহার করে আপনি আপনার জ্ঞান পরীক্ষা করতে এবং আপনার বোঝাপড়া উন্নত করতে পারেন।
- ম্যাটেরিয়া মেডিকা উপর একটি বই লিখুন। ম্যাটেরিয়া মেডিকা উপর একটি বই লিখে আপনি আপনার জ্ঞান সংগঠিত করতে এবং আপনার বোঝাপড়া উন্নত করতে পারেন।
ম্যাটেরিয়া মেডিকা অধ্যয়ন একটি জীবন্ত প্রক্রিয়া। আপনি যত বেশি শিখবেন, তত বেশি আপনি বুঝতে পারবেন। ধৈর্য ধরুন এবং নিরলসভাবে কাজ করুন, এবং আপনি অবশেষে ম্যাটেরিয়া মেডিকাতে একজন বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠবেন।