হোমিওপ্যাথি প্রাকৃতিক নিয়মে রোগ আরোগ্য – অনুচ্ছেদ: ৪৬ ।
হোমিওপ্যাথি প্রাকৃতিক নিয়মে রোগ আরোগ্যের কতিপয় উদাহরণ: অনুচ্ছেদ: ৪৬ অনুবাদ: প্রকৃতিতে সদৃশ লক্ষণসম্পন্ন রোগের দ্বারা রোগ আরোগ্যের অনেক উদাহরণই প্রমাণ স্বরূপ উপস্থাপন করা যায় কিন্তু সেসবের প্রয়োজন নেই, যেহেতু আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে আরও নিশ্চিত ও সন্দেহাতীত কিছু বিষয় সম্পর্কে বলা।
এ উপলক্ষ্যে অল্পসংখ্যক এমন কিছু রোগের উদাহরণ দিবো যেগুলো চিরকাল একইভাবে নির্দিষ্ট কোন এক প্রকার মায়াজম হতে উৎপন্ন হয় এবং এ কারণে তারা বিশেষ বিশেষ নামে অভিহিত হওয়ার যোগ্য। এদের মধ্যে অনেকগুলো মারাত্মক লক্ষণযুক্ত ভয়ঙ্কর বসন্তরোগ একটি প্রধান স্থান অধিকার করে আছে যা সদৃশ লক্ষণযুক্ত অনেকগুলো রোগ অপসারিত ও আরোগ্য করেছে।
বসন্তরোগ কতই না প্রবল চক্ষুপ্রদাহ উৎপন্ন করেছে, এমনকি কখনো কখনো অন্ধত্বেরও সৃষ্টি করেছে এবং দেখুন এটা থেকে টিকা তৈরী করে সেই টিকা দিয়ে ডেজোটিয়াক্স এবং লিরয় প্রত্যেকে আলাদা আলাদাভাবে একটি করে ক্রনিক চক্ষুপ্রদাহ স্থায়ীভবে আরোগ্য করেছিলেন। ক্লাইন বলেন যে, মাথার চর্মরোগ চাপা পড়ার ফলে উৎপন্ন দুই বছরের পুরনো অন্ধত্ব এর (বসন্তরোগ) দ্বারা সম্পূর্ণ আরোগ্য হয়েছিলো। এই বসন্তরোগ কত ক্ষেত্রেই না বধিরতা ও শ্বাসকষ্টের কারণ হয়ে থাকে। জে. ফ্রান্সিস ক্লস এই রোগের চরম অবস্থায় ঐ দুই প্রকার ক্রনিক রোগ আরোগ্য হতে দেখেছিলেন।
Read More:হোমিওপ্যাথিতে হাঁপানি আরোগ্যের পদ্ধতি
অন্ডকোষের প্রচন্ড স্ফীতি বসন্তরোগের একটি বিশিষ্ট লক্ষণ যা প্রায়ই লক্ষ্য করা যায়। ক্লাইন লক্ষ্য করেন যে, বাম অন্ডকোষে আঘাতজনিত করণে উৎপন্ন একটি প্রচন্ড শক্ত স্ফীতি সাদৃশ্যের ফলে এর দ্বারা আরোগ্য হয়েছে। অন্য আর একজন পর্যবেক্ষকও ঐ একই ধরনের অন্ডকোষের স্ফীতি ঐ রোগ দ্বারা আরোগ্য হতে দেখেছিলেন। বসন্তরোগের কষ্টকর লক্ষগুলোর মধ্যে অন্ত্রের আমাশয় অন্যতম এবং একটি আমাশয় রোগীর বসন্ত হওয়ায় এই লক্ষণের সাদৃশ্যেরকারণে রোগীর উক্ত আমাশয় আরোগ্য হয়েছিলো যা ফ্রান্সিস ওয়েন্ট লক্ষ্য করেছিলেন।
টিকা লওয়ার পর বসন্ত হলে যেভাবে হোমিওপ্যাথি প্রাকৃতিক নিয়মে রোগ আরোগ্য হয়?
টিকা লওয়ার পর বসন্ত হলে তা অত্যন্ত সদৃশ ও অধিকতর শক্তিশালী হওয়ায় বসন্ত গোবসন্তের টিকাকে বাড়তে না দিয়ে সম্পূর্ণরূপে অপসারিত করে। অপরপক্ষে, গোবসন্তের টিকার প্রায় পূর্ণ অবস্থায় বসন্তরোগ দেখা দিলে তার খুব সাদৃশ্যের কারণে এই টিকা বসন্ত রোগটিকে প্রশমিত ও মৃদু করে দেয় যা মুরী এবং আরও অনেকে এই মত প্রকাশ করেন।

গোবসন্তের টিকার রসে বসন্ত প্রতিরোধক পদার্থ ছাড়া চর্মরোগ উৎপাদক অন্য আর এক প্রকার সংক্রামক পদার্থ থাকে। এর ফলে ছোট ছোট শুষ্ক ফুষ্কুড়ি (কদাচিৎ বড় ও পূঁজযুক্ত হোমিওপ্যাথি প্রাকৃতিক) লাল বর্ণ হয়ে প্রায়ই লাল গোলাকার ক্ষত চিহ্নের সাথে মিলিত হয় এবং সাথে থাকে ভয়ানক চুলকানি। এই উদ্ভেদ অনেক শিশুরই গোবসন্তের এই টিকা লাল হয়ে উঠার কয়েকদিন আগে অথবা প্রায়ই কয়েকদিন পরে দেখা যায় এবং সাদৃশ্যের কারণে কয়েকদিন পর সেখানে ছোট ছোট লাল শক্ত দাগ রেখে তা অদৃশ্য হয়ে যায়।
অনেক পর্যবেক্ষকই স্বীকার করেন যে, গোবসন্তের টিকা লওয়ার পর সাদৃশ্যজনিত কারণে শিশুদের দীর্ঘদিনের ঐ প্রকার কষ্টদায়ক চর্মরোগ সম্পূর্ণ ও স্থায়ীভাবে আরোগ্য হয়েছে। বাহুর স্ফীতি গোবসন্তের আর একটি অদ্ভূত লক্ষণ। দেখা গেছে, গোবসন্ত হওয়ার পর এক ব্যক্তির অর্ধপক্ষাঘাতগ্রস্ত বাহুর স্ফীতি আরোগ্য হয়েছিলো। গোবসন্তের স্ফোটকস্থল যখন লাল হতে থাকে তখন যে জ্বর হয় তার দ্বারা দু’টি রোগীর সবিরাম জ্বর আরোগ্য হয়েছিলো যা জে হান্টার লক্ষ্য করেছিলেন এবং তিনি বলেন যে, দুই প্রকারের সদৃশ জ্বর একই সময়ে একই দেহে অবস্থান করতে পারে না এবং হার্ডেজ তা সমর্থন করেন।
হামরোগের পর যেভাবে হুপিং কাশি হোমিওপ্যাথি প্রাকৃতিক নিয়মে রোগ আরোগ্য হয়।
হামের জ্বর ও কাশির বৈশিষ্ট্যের সাথে হুপিং কাশির বৈশিষ্ট্যের যথেষ্ট সাদৃশ্য আছে, যার ফলে বস্কুইলন লক্ষ্য করেন যে, কোন এক মহামারীতে যেখানে একই সময়ে একই সাথে এই দু’টি রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় সেখানে অনেক শিশু যারা হামরোগে আক্রান্ত হয় তারা হুপিং কাশির আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়। যদি হামের সাথে হুপিং কাশির কেবলমাত্র আংশিক সাদৃশ্য না থাকতো অর্থাৎ হুপিং কাশিরও যদি হামের মতো চর্মোদ্ভেদ থাকতো তাহলে হামের দ্বারা হুপিং কাশি সেই মহামারী রোগাক্রান্ত স্থলে এবং পরবর্তী ঐরূপ সকল স্থলেই নিবারিত হতে পারতো।
যাহোক, দেখা গেছে যে, মহামারীর প্রাদুর্ভাবকালে হাম অনেক ক্ষেত্রেই হুপিং কাশি নিবারণ করে থাকে। কিন্তু যদি হাম এমন কোন রোগের সাথে দেখা দেয় যার সাথে তার প্রধান লক্ষণ উদ্ভেদের মিল রয়েছে তাহলে হাম তাকে নিশ্চিতভাবে অপসারিত করে সদৃশ নীতি অনুসারে আরোগ্য সংঘটন করে। যেমন কর্টুম লক্ষ্য করেন যে, হার্পিস জাতীয় একটি ক্রনিক উদ্ভেদ হাম দেখা দেওয়ার পর সম্পূর্ণরূপে ও স্থায়ীভাবে (সদৃশ নীতি অনুসারে) সেরে গেছে।
একজনের মুখে, ঘাড়ে ও বাহুতে ছয় বৎসর ধরে ভয়ানক জ্বালাকর ছোট ছোট উদ্ভেদযুক্ত চর্মরোগ দেখা দিয়েছিলো যা আবহাওয়ার প্রত্যেক পরিবর্তনে বৃদ্ধি পেতো। তার শরীরে হাম দেখা দেওয়ায় হোমিওপ্যাথি প্রাকৃতিক ঐ সকল উদ্ভেদ চর্মের উপরে স্ফীতির আকারে প্রকাশ পেলো এবং হাম সেরে যাওয়ার পর চর্মরোগও সেরে গেলো এবং পুনর্বার আর দেখা যায়নি।
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত দৃষ্টান্তগুলোর দ্বারা হ্যানিম্যান আমাদের যা বুঝিয়েছেন তা হচ্ছে, প্রাকৃতিকভাবে দু’টি সদৃশ রোগ একই দেহে অবস্থান করলে কম শক্তিশালী রোগটি বেশী শক্তিশালী রোগটি কর্তৃক অপসারিত হয় এবং আংশিক স-দৃশ হলে আংশিকই অপসারিত হয়। অথবা যতটুকু সদৃশ হয় ঠিক ততটুকুই ধ্বংস হয়।