হোমিওপ্যাথিতে হাঁপানি আরোগ্যের পদ্ধতি: হাঁপানি একটি দীর্ঘমেয়াদী শ্বাসযন্ত্রের রোগ যা ফুসফুসের বায়ুবাহী পথকে আক্রমণ করে। বায়ুবাহী পথগুলি সংকুচিত হয়ে যায় এবং প্রদাহ হয়, যা শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। হাঁপানির লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:
- শ্বাসকষ্ট
- কাশি
- বুকে চাপ অনুভূতি
- শ্বাস নেওয়ার সময় শব্দ
- বুকের ব্যথা

উপরোক্ত লক্ষণগুলি দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসা নেওয়া জরুরি। প্রথমত তাদের লাইফস্টাইল পরিবর্তন করতে হবে। যেমন:
হাঁপানির আরোগ্যের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় টিপস
- অ্যালার্জেন এবং ধূমপানের সংস্পর্শ এড়ানো: অ্যালার্জেন এবং ধূমপান হাঁপানির উপসর্গগুলিকে ট্রিগার করতে পারে।
এগুলি এড়ানো হাঁপানির নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে। - নিয়মিত ব্যায়াম করা:নিয়মিত ব্যায়াম শ্বাসনালীকে শক্তিশালী করতে এবং হাঁপানির উপসর্গগুলি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
তবে, ব্যায়াম করার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলা গুরুত্বপূর্ণ। - সঠিক ওজন বজায় রাখা:অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা হাঁপানির ঝুঁকি বাড়াতে পারে। সঠিক ওজন বজায় রাখা হাঁপানির নিয়ন্ত্রণে
সহায়তা করতে পারে। - পর্যাপ্ত ঘুম পাওয়া: পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের জন্য পুনরুদ্ধার এবং নিরাময়ের জন্য প্রয়োজনীয়। ঘুমের অভাব হাঁপানির উপসর্গগুলিকে
ট্রিগার করতে পারে হাঁপানি রোগের রোগীর চিকিৎসা করতে হলে এর দুটি দিক আমাদের প্রথমেই বিচার করতে হবে। - পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা।
- নির্দিষ্ট নিয়মে গোসল করা।
- যতদূর সম্ভব ঠান্ডা এড়িয়ে চলা।
- রাত্রে ঘুমাতে যাওয়ার আগে নাক দিয়ে গরম পানির ভাপ নেওয়া যেতে পারে।

হোমিওপ্যাথিতে হাঁপানি আরোগ্যের পদ্ধতি
হোমিওপ্যাথিতে হাঁপানির একটি দিক হল অচির(Acute/একিউট)অবস্থা,অপরটি হল চির (Chronic/ক্রনিক) অবস্থা। প্রথমেই অচির অবস্থার কষ্টকর লক্ষণগুলির দ্রুত উপশম করতে হবে। রোগী যখন অনেকটা সুস্থ মনে করবে তখনই রোগীকে স্থায়ী ভাবে আরোগ্য করার জন্য গভীর ক্রিয়াশীল ঔষধগুলির ব্যবস্থা করতে হবে।
Read More:ক্রনিক ডিজিজ চিকিৎসা কিভাবে করতে হয়
হাঁপানি – বক্ষদেশে সর্দি সঞ্চয় হেতু কষ্টকর হাঁপানী ও সে কারণে শ্বাসকষ্টের আবির্ভাব সাইকোসিসের একটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণ এবং ন্যাট্রাম সালফের মধ্যে এই লক্ষণটি বিশেষভাবে আছে।
মনে করুন, সাইকোটিক কোন মাতা পিতার একটি সন্তান সামান্য ভিজা ঠান্ডা বাতাস লাগার ফলে প্রায়ই সর্দিকাশি ও ব্রঙ্কাইটিসে আক্রান্ত হয় এবং ক্রনিক ডিজিজে অনভিজ্ঞ কোন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক সেই সন্তানটিকে বারবার তরুণ রোগের ঔষধ যেমন বেলেডোনা বা এন্টিম টার্ট প্রয়োগ করে উপশম আনয়নে সাহায্য করেছেন।
কিন্তু স্থায়ীাবে তাকে আরোগ্য করতে সক্ষম হননি এরুপ অবস্থায় আপনি যদি ন্যাট্রাম সালফ প্রয়োগ করেন তাহলে রোগীটি অবশ্যই আরোগ্য হবে। এটিই হোমিওপ্যাথিতে হাঁপানি আরোগ্যের পদ্ধতি। নিম্নে ন্যাট্রাম সালফ ওষুধটি সম্পর্কে কিছু আলোচনা তুলে ধরা হলো –
Natrium sulphuricum
ন্যাট্রাম মিউর ও সালফার এই দুটি গরমকাতর ঔষধের সংমিশ্রণ হতে ন্যাট্রাম সালফ ঔষধটি প্রস্তুত। কিন্তু ঔষধটি গরম বা শীত কোন অবস্থাতেই কাতর নয়। ইহা একটি গভীরক্রিয় সাইকোটিক ঔষধ। গভীরতার দিক দিয়ে সাইকোটিক মায়াজমের সমকক্ষ অন্য দুটি ঔষধহচ্ছে থুজা ও মেডোরিনাম।
ন্যাট্রাম সালফের রোগ লক্ষণসমূহ বর্ষাকালে বৃদ্ধি পায় এবং গরমকালে রোগ লক্ষণ বৃদ্ধি না হলেও সে গরম কাল অপছন্দ করে। শুষ্ক হতে ভিজা আবহাওয়ার আগমনে ও স্যাতসেতে ঘরে বাস করার ফলে এর শারীরিক ও মানসিক সর্ব প্রকার লক্ষণই বৃদ্ধি পায় এবং এ দৃষ্টিকোণ থেকে ইহা একটি ভিজা আবহাওয়ার ঔষধ।
হোমিওপ্যাথিতে হাঁপানি আরোগ্যের পদ্ধতি চিকিৎসার জন্য তুলনামূলক আলোচনা: রাসটক্স, ক্যালকেরিয়া কার্ব, ডালকামারা, মেডোরিণাম, থুজা, রডোডেনড্রন।
ন্যাট্রাম সালফের তুলনামূলক আলোচনা
ভিজা আবহাওয়ায়, জলো আবহাওয়ায় ও বর্ষাকালে রোগ লক্ষণের বৃদ্ধি ন্যাট্রাম সালফের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণ। এই লক্ষণটি একটি সাইকোটিক লক্ষণ এবং এই লক্ষণে আরো অনেক ঔষধই আছে তবে তাদের মধ্যে প্রধান প্রধান ঔষধগুলি হচ্ছে ক্যালকেরিয়া কার্ব, ন্যাট্রাম সালফ, থুজা, পালসেটিলা, ডালকা মারা, রাস টক্স ও রডোডেনড্রন।
বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণসমষ্টির ভিত্তিতে একটি ঔষধকে অন্য সকল ঔষধ হতে আলাদা করতে হয়। অন্যদিকে ন্যাট্রাম সালফ, থুজা এবং মেডোরিণাম তিনটি ঔষধই গভীর সাইকোটিক ঔষধ এবং গভীরতার দিক দিয়ে কোনটিই কোনটির চেয়ে কম নয়।
হাইড্রোজেনয়েড (Hydrogenoid Constitution) ধাতুযুক্ত রোগী কাদেরকে বলা হয়?
উত্তর: যে সকল রোগী বর্ষার ভিজা আবহাওয়া এবং যে সকল খাদ্যে জলীয় অংশ বেশী সে সকল খাদ্য সহ্য করতে পারেনা অর্থাৎ এতে যাদের রোগ লক্ষণের আবির্ভাব অথবা রোগ লক্ষণের বৃদ্ধি হয় তাদেরকে হাইড্রোজেনয়েড ধহতুযুক্ত রোগী বলা হয়।
পরিশেষে বলতে চাই যেসব সতর্কতা আপনার জরুরী তা মেনে চলুন। হোমিওপ্যাথিতে হাঁপানি আরোগ্যের অত্যন্ত ফলপ্রসূ চিকিৎসা রয়েছে। লক্ষণ অনুযায়ী সঠিক ওষুধ নির্বাচন হলে হোমিওপ্যাথিতে হাঁপানি আরোগ্যের অধিকাংশ সমস্যাই সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
এর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই এবং সারা জীবন ঔষধ খেয়ে যেতে হয় না। প্রয়োজন শুধু ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলা। যাতে আপনি আপনার অবস্থার জন্য সর্বোত্তম চিকিৎসা পান।
Resources: https://mzamin.com/news.php?news=34487
5 thoughts on “হোমিওপ্যাথিতে হাঁপানি আরোগ্যের পদ্ধতি”
Comments are closed.