
ক্রনিক ডিজিজ চিকিৎসা কিভাবে করতে হয়? ক্রনিক ডিজিজ হচ্ছে ঐ সমস্ত রোগ যেরোগগুলি ক্রনিক মায়াজম থেকে উদ্ভূত অর্থাৎ ক্রনিক মায়াজম্যাটিক সাধারণ চিহ্ন ও লক্ষণসমূহের সমষ্টিই হচ্ছে ক্রনিক ডিজিজ। কারণ আমরা জানি, কিছু সাধারণ চিহ্ন ও লক্ষণ একত্র করে একটি রোগের নামকরণ করা হয়।
ক্রনিক ডিজিজ চিকিৎসা
হ্যানিম্যান অর্গাননের ২০৪ থেকে ২০৯ নম্বর পর্যন্ত সূত্রে ক্রনিক ডিজিজ চিকিৎসা কিভাবে করতে হবে সে সম্পর্কে নির্দেশনা দিয়েছেন। ২০৪ নম্বর সূত্রে তিনি বলেন,
‘If we deduct all chronic affections, ailments and diseases that depend on a persistent unhealthy mode of living, (#77) as also those innumerable medicinal maladies (v. #74) caused by the irrational,
persistent, harassing and pernicious treatment of diseases often only of trivial character by physicians of the old school,
most of the remainder of chronic diseases result from the development of these three chronic miasms, internal syphilis, internal sycosis, but chiefly and in infinitely greater proportion, internal psora’
অর্থাৎ যে সকল ক্রনিক ডিজিজ ক্রমাগত অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন হতে সৃষ্ট এবং যে সকল অসংখ্য ঔষধ জাত রোগ অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসকদের দ্বারা অযৌক্তিক, অবিরাম,কষ্টদায়ক ও বিপদ সংকুল চিকিৎসার ফলে সৃষ্টি হয়েছে,
সেগুলিকে বাদ দিলে অবশিষ্ট ক্রনিক রোগসমূহের অধিকাংশই তিনটি ক্রনিক রোগ অভ্যন্তরীন সিফিলিস,অভ্যন্তরীণ সাইকোসিস এবং প্রধানত ও সর্বাপেক্ষা বহুল পরিমাণে অভ্যন্তরীণ সোরা হতে উদ্ভূত।
Read More:হোমিওপ্যাথিতে সিফিলিস মায়াজম
হ্যানিম্যান বলতেছেন যে, দীর্ঘকাল ব্যাপী অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন হতেও এক প্রকার ক্রনিক ডিজিজের সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে অ্যালোপ্যাথিক সম্প্রদায়ের দ্বারাও অযৌক্তিক, অবিরাম, কষ্টদায়ক ও বিপদ সংকুল চিকিৎসার ফলে অসংখ্য ক্রনিক ডিজিজ সৃষ্টি হয়।
উপরোক্ত দুই প্রকার ক্রনিক ডিজিজ বাদে যত ক্রনিকডিজিজ আছে তার অধিকাংশই তিনটি ক্রনিক ডিজিজ অভ্যন্তরীন সিফিলিস, অভ্যন্তরীণ সাইকোসিস এবং এবং অভন্তরীণ সোরা হতে উদ্ভূত।
এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, হ্যানিম্যান বলতেছেন অভ্যন্তরীণ সিফিলিস, অভ্যন্তরীণ সাইকোসিস এবং সোরা হতে অনেক ক্রনিক রোগের সৃষ্টি হয়। এখানে প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা সকলেই জানি ক্রনিক ডিজিজ মাত্র তিনটিই।
ক্রনিক ডিজিজ বলতে হ্যানিম্যান কোন রোগগুলিকে বুঝিয়েছেন?
এ প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে, প্রকৃত ক্রনিক রোগগুলিকে বার বার বিসদৃশ চিকিৎসায় চাপা দিলে যে সমস্ত জটিল রোগ যেমনঃ অন্ধত্ব, বধিরতা, উন্মত্ততা,শোথ, সন্নাস ইত্যাদি দেখা দেয় সে সমস্ত রোগকে অসংখ্য ক্রনিক রোগ নামে অভিহিত করেছেন। হোমিওপ্যাথি মতে এ রোগ লক্ষণগুলিকে গৌণ লক্ষণও বলা হয়।
অর্গাননের ১০৫ নম্বর সূত্রে হ্যানিম্যান বলতেছেন যে, ক্রনিক রোগ চিকিৎসা ক্ষেত্রে সুবিধা হলো দেহে এক সময়ে একাধিক ক্রনিক রোগ অভ্যন্তরীণ ভাবে থাকলে একটি রোগই বিকশিত এবং বাকী দুটি সুপ্ত অবস্থায় থাকে এবং যখন যে রোগ বিকশিত থাকে তখন সেই রোগের চিকিৎসাই করতে হয়।ফলে প্রাথমিক ও গৌণ লক্ষণগুলি আপনা আপনিই বিদূরিত হয়।
২০৬ নম্বর সূত্রে হ্যানিম্যান বলতেছেন যে, ক্রনিক ডিজিজ চিকিৎসার প্রথমেই রোগীর কোন যৌন রোগ হয়েছিল কিনা তা বিশেষ ভাবে অনুসন্ধান করে জেনে নেয়া আবশ্যক।কেন?
কারণ রোগীর মধ্যে সিফিলিস বা সাইকোসিসের কোন সংক্রমণ থাকলে সে দিকে লক্ষ্য রেখে চিকিৎসা কার্য পরিচালনা করতে হবে। অবশ্য,প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সিফিলিস বা সাইকোসিস রোগ একক অবস্থায় পাওয়া যায় না।
এর কারণ হলো,যেহেতু সোরাই প্রকৃত পক্ষে সর্ব প্রকার ক্রনিক রোগের মূল কারণ সেহেতু উক্ত তিনটি ক্রনিক রোগের পরস্পরের নানা প্রকার সংমিশ্রণে এবং অ্যালোপ্যাথিক কুচিকিৎসার ফলে সেগুলি নানা নাম ধারণ করে বিকৃত, বর্ধিত অথবা রূপান্তরিত রূপ ধারণ করে।

এরপর হ্যানিম্যান ২০৭ নম্বর সূত্রে বলতেছেন যে, উপরোল্লিখিত বিষয়াদি জেনে নেয়ার পর একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের অনুসন্ধান করার আরও যা বাকী থাকে তা হচ্ছে, ঐ দিন পর্যন্ত ঐ ক্রনিক রোগের কি প্রকার চিকিৎসা করা হয়েছে,
কোন কোন বিকৃতির ঔষধ প্রধানত: এবং পুনরায় পুনরায় প্রয়োগ করা হয়েছে,কোন কোন খনিজ পদার্থ মিশ্রিত পানিতে তাকে গোসল করান হয়েছে এবং এ সকল চিকিৎসার ফলই বা কি হয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এসব জেনে চিকিৎসকের লাভ কি?
এ প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে, এসব জানার মাধ্যমে চিকিৎসকের পক্ষে জানা সম্ভব হয় রোগীর প্রাকৃতিক রোগ কতটা বিকৃতি লাভ করেছে এবং সে অনুপাতে যেখানে সম্ভব সেখানে এ সকল অনিষ্টকর কৃত্রিম প্রক্রিয়ার আংশিক সংশোধন করা অথবা যে সকল ঔষধ পূর্বে অযথা প্রযুক্ত হয়েছিল সেগুলির পুনরায় প্রয়োগ নিবারণ করা যেতে পারে।
হ্যানিম্যান ২০৮ নম্বর সূত্রে বলতেছেন যে, এরপর রোগীর বয়স,তার জীবন যাপন প্রণালী ও খাদ্যাভ্যাস,তার পেশা, তার পারিবারিক অবস্থান,তার সামাজিক সম্পর্ক সমূহ ইত্যাদি অবশ্যই বিবেচনায় আনতে হবে।
কেন? কারণ এই সকল বিষয় তার রোগ বৃদ্ধি করেছে কিনা, অথবা চিকিৎসায় এগুলি কি পরিমাণে সহায়তা বা বাধা প্রধান করতে পারে তা নির্ণয় করা। একইভাবে তার চরিত্রের ও মনের অবস্থায়ও জানতে হবে।
কারণ অনেক সময় রোগীর মানসিক অবস্থার অথবা চরিত্রের গতিভেদে চিকিৎসার সুবিধা বা অসুবিধা হয়। সে ক্ষেত্রে রোগীর চরিত্রের কোন সমস্যা থাকলে তার সংশোধন,গুণ থাকলে তাতে উৎসাহ প্রদান করা কতৃব্য।
মানসিক প্রফুল্লতা থাকলে তাতে সহায়তা করা এবং অতিরিক্ত চিন্তা বা অবসাদ থাকলে তা প্রশমনের চেষ্টা করার জন্য সমস্ত বিষয় জানা প্রয়োজন।
হ্যানিম্যান ২০৯ নম্বর সূত্রে বলতেছেন, এতটুকু শেষ করার পর রোগীর সহিত পুনরায় পুনরায় কথোপকথন দ্বারা,পূর্ব প্রদত্ত উপদেশানুসারে, তার রোগের যতদূর সম্ভব পূর্ণ প্রতিকৃতি অঙ্কিত করার চেষ্টা করা চিকিৎসকের কর্তব্য।
এ সবের ভিত্তিতে তিনি সর্বাপেক্ষা আশ্চর্যজনক ও অসাধারণ (বৈশিষ্ট্যপূর্ণ) লক্ষণসমূহকে ফুটিয়ে তুলতে পারবেন এবং তাদের সাহায্যে প্রথম অধিকতম লক্ষণসাদৃশ্য সম্পন্ন এন্টিসোরিক বা অন্য ঔষধ নির্বাচিত করে চিকিৎসা আরম্ভ করতে ও অগ্রসর হতে পারবেন।
Resources: