গর্ভাবস্থা ও ডায়াবেটিস যেসব সতর্কতা আপনার জরুরী – গর্ভাবস্থা ও ডায়াবেটিস (Gestational Diabetes Mellitus – GDM) এমন একটি অবস্থা যা মা ও শিশু উভয়ের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। নিয়ন্ত্রণে না থাকলে মা ও বাচ্চা উভয়েই অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীনে পরতে পারেন।
যেসব সতর্কতা অবলম্বন করলে গর্ভাবস্থা ও ডায়াবেটিসে মা ও বাচ্চা উভয়েই সুস্থ থাকবে আমি আমার এই ব্লগে এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি তুলে ধরবো। আশা করি আপনারা আমার সঙ্গে থাকবেন। চলুন আলোচনা শুরু করা যাক।
আজকে আমরা জানবো কি কি টপিক গুলো আলোচনা করব –
- গর্ভাবস্থা ও ডায়াবেটিস এর ভূমিকা
- গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের লক্ষণ
- গর্ভাবস্থা ডায়াবেটিস নির্ণয়
- গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কত থাকা উচিত?
- গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের জন্য রক্ত পরীক্ষা
- গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের জন্য রক্ত পরীক্ষার ফলাফল
- গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল
- গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কত হলে ইনসুলিন নিতে হয়?
- ইনসুলিন নেওয়ার সময় কিছু ক্ষতিকর দিক
- গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস রোগীর খাবার
- গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা
- গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ও তার কারণ
- গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আপনি যা করতে পারেন
- উপসংহার
গর্ভাবস্থা ও ডায়াবেটিস: এর ভূমিকা
ডায়াবেটিস হলো একটি অসুখ যেখানে শরীর ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না বা ইনসুলিন সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না। ইনসুলিন হলো একটি হরমোন যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ডায়াবেটিস হলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেয়ে গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার দিকে নিয়ে যেতে পারে।
সারা বিশ্বে ডায়াবেটিস ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস আক্রান্ত হয় ৮ থেকে ১৩ শতাংশ।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হল এক ধরনের ডায়াবেটিস যা গর্ভকালীন সময়ে দেখা দেয়। এটি তখন ঘটে যখন শরীর ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না বা ইনসুলিন সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না। এটি সাধারণত সন্তান প্রসবের পরে কমে আসে।
ইনসুলিন হল একটি হরমোন যা শরীরকে গ্লুকোজ ব্যবহার করতে এবং শক্তি উৎপাদন করতে সাহায্য করে। যখন গর্ভবতী মহিলাদের শরীরে ইনসুলিন যথেষ্ট পরিমাণে উৎপাদন হয় না, তখন তাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস একটি অস্থায়ী অবস্থা যা গর্ভাবস্থার সময় মহিলাদের প্রায় ৫%-কে আক্রান্ত করে। গর্ভাবস্থার ডায়াবেটিস টাইপ 2 ডায়াবেটিসের গর্ভবতী মা এবং শিশু উভয়ের জন্যই ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের লক্ষণ
গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে তেমন নির্দিষ্ট কোন লক্ষণ নেই তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়।
- অত্যধিক তৃষ্ণা
- অত্যধিক প্রস্রাব
- অত্যধিক ক্ষুধা
- অত্যধিক ক্লান্তি
- মুখ শুকিয়ে যাওয়া
- ঘন ঘন মাথা ঘোরা
- ঝাপসা দৃষ্টি
- যোনি থেকে রক্তপাত
- যোনিপথ ও চামড়ার সংক্রমণ
- বমি বমি ভাব অথবা বমি
গর্ভাবস্থা ডায়াবেটিস নির্ণয়:
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নির্ণয়ের জন্য রয়েছে রক্ত পরীক্ষা এবং প্রস্রাব পরীক্ষা। এই পরীক্ষাগুলি সাধারণত গর্ভাবস্থার ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহের মধ্যে করা হয়। গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন গড়ে সাধারণত ৫% গর্ভবতী মায়েরা।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কত থাকা উচিত?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বের প্রায় ৪২২ মিলিয়ন মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, যার মধ্যে প্রায় ৯০% ডায়াবেটিস মেলিটাস টাইপ-২ এ আক্রান্ত। বাকি দশ শতাংশ প্রাথমিকভাবে টাইপ- ডায়াবেটিস ও জেস্টেশনাল বা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। টাইপ-১ (জুভেনাইল বা অটোইমিউন রোগ বলা হয়)
ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় শরীরের মোট ইনসুলিনের পরিমাণ কমে যায় ফলে শর্করার সাম্যাবস্থা নষ্ট হয়। যদি রক্তের শর্করার মাত্রা নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেশি (7.8 মিলিমোল/লিটার) থাকে, তাহলে মহিলাকে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস আছে বলে ধরে নেওয়া হয়।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের জন্য রক্ত পরীক্ষা:
গর্ভাবস্থার ডায়াবেটিস (জিডিএম) একটি অবস্থা যা গর্ভাবস্থায় মহিলাদের রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করে। গর্ভাবস্থার ডায়াবেটিস (জিডিএম) গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এবং তাদের সন্তানদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। জিডিএম নির্ণয়ের জন্য রক্ত পরীক্ষা করা হয়। রক্ত পরীক্ষাগুলির মধ্যে রয়েছে:
- গ্লুকোজ টলারেন্স পরীক্ষা ওজিটিটি(Oral glucose tolerance test বা OGTT): এই পরীক্ষাটি গর্ভাবস্থার ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহের মধ্যে করা হয়। পরীক্ষাটিতে মহিলাকে খালি পেটে একটি গ্লুকোজ পান করতে দেওয়া হয় এবং তারপর দুই ঘন্টা পরে রক্তের নমুনা নেওয়া হয়।
- যদি রক্তের শর্করার মাত্রা নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেশি থাকে(7.1 মিলিমোল/লিটার), তাহলে মহিলাকে গর্ভাবস্থার ডায়াবেটিস (জিডিএম) আছে বলে ধরে নেওয়া হয়।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের জন্য রক্ত পরীক্ষার ফলাফল:
- স্বাভাবিক: রক্তের শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক।
- সীমিত: রক্তের শর্করার মাত্রা তুলনামূলক মাত্রার চেয়ে বেশি, তবে অসুস্থতার সীমায় নাই।
- অসুস্থ: রক্তের শর্করার মাত্রা অসুস্থতার সীমায়।
যদি আপনার রক্ত পরীক্ষার ফলাফল সীমিত বা অসুস্থ হয়, তাহলে আপনার ডাক্তার আপনাকে গর্ভাবস্থার ডায়াবেটিস (জিডিএম) আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে আরও পরীক্ষাগুলি করতে বলতে পারেন।
আরও একটি পরীক্ষা পদ্ধতি হচ্ছে Glucose Challenge Test বা GCT. দিনের যে কোনও সময় ৫০ গ্রাম গ্লুকোজ খাওয়ার ১ ঘণ্টা পর রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা 7.8মিলিমোল/লিটার বা তার চেয়ে উপরে হলে তাকে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হিসেবে ধরে নিতে হবে। GCT পজিটিভ হলে অবশ্যই OGTT পরীক্ষা করাতে হবে। গড়ে সাধারণত 5% গর্ভবতী মায়েরা গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল:
অধ্যাপক মাহাতাবের মতে, গর্ভকালীন অবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত জরুরি। খালি পেটে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৪.৫ মিলিমোল/লিটার থেকে ৫ বা সর্বোচ্চ ৫.৫ মিলিমোল/লিটার গর্ভকালীন অবস্থায় নরমাল মনে করা হয়।

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কত হলে ইনসুলিন নিতে হয়?
যদি আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম না হন,তার জন্য মা ও শিশু উভয়ের জন্যই ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস যদি নিয়ন্ত্রণে না থাকে তাহলে ইনসুলিন নিতে হতে পারে। শরীরে ইনসুলিনের প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায় গর্ভাবস্থায়, যার ফলে বেড়ে যেতে পারে রক্তে শর্করার মাত্রা । ইনসুলিন দিয়ে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
সাধারণত, যদি রক্তে গ্লুকোজের স্তর ৯০ মিলিগ্রাম/ডিসিলিটার (ফাস্টিং) বা ১৪০ মিলিগ্রাম/ডিসিলিটার (পোস্টপ্র্যান্ডিয়াল) এর উপরে চলে যায় এবং খাবার পরিবর্তন করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনা , তখন চিকিৎসক ইনসুলিন ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে ইনসুলিন নেওয়ার আগে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ। ডাক্তার আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করে দেখবেন যে আপনার ইনসুলিন নেওয়ার দরকার আছে কিনা। যদি আপনার ইনসুলিন নেওয়ার জরুরী হয়, তাহলে ডাক্তার আপনাকে ইনসুলিন নেওয়ার সঠিক পদ্ধতি শিখিয়ে দেবেন।
ইনসুলিন নেওয়ার সময় কিছু ক্ষতিকর দিক:
ইনসুলিন একটি নিরাপদ এবং কার্যকর ওষুধ যা গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। ইনসুলিন নেওয়ার সময় কিছু ক্ষতিকর দিক দেখা দিতে পারে, যেমন:
- ইনসুলিন নেওয়ার স্থানে ব্যথা হয়।
- রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যায়। (হাইপোগ্লাইসেমিয়া)
- ওজন বৃদ্ধি পায়।
- ইনসুলিনের প্রতি অ্যালার্জি দেখা দেয়।
ইনসুলিন নেওয়ার সময় এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলির সতর্কতা অবলম্বন করা গুরুত্বপূর্ণ। যদি উপরোক্ত সমস্যাগুলি অনুভব করেন, তাহলে অবিলম্বে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস রোগীর খাবার:
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস রোগীর খাবারকে ডায়াবেটিস মায়েদের খাবার বলা হয়। ডায়াবেটিস মায়েদের খাবার খেলে তারা তাদের রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন এবং তাদের সন্তানের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি কমাতে পারেন। এই খাদ্যতালিকায় এমন খাবার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যা রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস মায়েদের খাবার খেতে হবে এমন কিছু টিপস এখানে দেওয়া হল:
জটিল শর্করার পাশাপাশি গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মায়েদের পুষ্টিকর প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে। এর মধ্যে মাছ, মুরগি, ডিম, টফু, বিনস, শুঁটি জাতীয় খাবার উল্লেখযোগ্য। পাশাপাশি ক্যালসিয়াম–সমৃদ্ধ খাবার যেমন দুধ, বাদাম, পালংশাক, ছোট মাছসহ বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে।
- স্বাস্থ্যসম্মত এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
- কম গ্লাইসেমিক সূচকযুক্ত খাবার খেতে হবে।
- প্রতিদিন ছয় থেকে সাতবার ঘন ঘন খাবার খেতে হবে।
- ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
- প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
- মাছ, মুরগি, ডিম, টফু, বিনস, শুঁটি জাতীয় খাবার উল্লেখযোগ্য। পাশাপাশি ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন দুধ, বাদাম, পালংশাক, ছোট মাছসহ বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে।
- চর্বিযুক্ত খাবার এবং পানীয় অল্প পরিমানে খেতে হবে।
- চিনিযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে।
- প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস মায়েদের খাবার তালিকা প্রত্যেকটি গর্ভবতী মাদের জন্য আলাদা আলাদা হতে পারে। ডাক্তার বা পুষ্টিবিদ আপনার জন্য একটি ব্যক্তিগতকৃত খাবার তালিকা তৈরি করে দিবেন। একজন পুস্টি বিশেষজ্ঞই পারেন আপনার উচ্চতা,ওজন, জীবন-যাপনের ধরণ ইত্যাদি বিস্লেষণ করে খাবারের পরিমাণ এবং আর কি খাবেন বা বাদদেবেন তা নির্ধারণ করে দিতে। গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস খাদ্যতালিকার জন্য কিছু নির্দিষ্ট উদাহরণগুলি হল:
- সকালের নাস্তা:গ্র্যানোলা বা ওটমিল, ফল, এবং দুধ
- দুপুরের খাবার: সালাদ, মুরগির বুকের মাংস, এবং ব্রাউনি
- রাতের খাবার: ভাত, মাছ, এবং সবজি
- স্ন্যাকস: ফল, শাকসবজি, এবং বাদাম
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস খাদ্যতালিকা অনুসরণ করে, গর্ভবতীমা তার রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে এবং তার শিশুকে সুস্থ এবং নিরাপদে জন্ম দিতে পারো।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ও তার কারণ
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের ঝুঁকির কারণ হল রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি থাকা। রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি থাকলে এটি মা এবং শিশু উভয়ের জন্যই সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এবার আসুন জেনে নেওয়া যাক গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কেন হয় তার কারণগুলি কি কি?
- অতিরিক্ত গ্লুকোজ: গর্ভবতী মায়ের রক্তে প্রয়োজনের অধিক গ্লুকোজ শিশুর রক্তে প্রবেশ করতে পারে। এটি শিশুর বৃদ্ধি এবং বিকাশকে আক্রান্ত করতে পারে।
- প্রি-এক্লাম্পসিয়া: প্রি–এক্লাম্পসিয়া হলো গর্ভবতী মহিলাদের এমন এক রোগ যেখানে রক্তচাপ বেড়ে যায় এবং প্রস্রাবের সাথে প্রচুর প্রোটিন নির্গত হয় যার ফলে অন্যান্য অঙ্গের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়। এটি গর্ভবতী মা এবং শিশু উভয়ের জন্যই বিপজ্জনক হতে পারে।
- গর্ভকালীন স্থূলতা: গর্ভকালীন স্থূলতার জন্য শিশুর ওজন বেশি হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। এটি শিশুর জন্মের সময় ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ:গর্ভাবস্থার পাঁচ মাস পর যদি রক্তচাপ বেড়ে যায়, তবে তাকে জেসটেশনাল হাইপারটেনশন বা গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ বলা হয়। যা শিশুর জন্মের সময় ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় গর্ভপাত: গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় মৃত সন্তান: গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস মৃত সন্তান জন্মদানের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
- নবজাতকের ওজন বৃদ্ধি হওয়া: গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নবজাতকের ওজন বৃদ্ধি হওয়ায় শিশুর জন্মের সময় ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।
- নবজাতকের গ্লুকোজ অভাব: গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নবজাতকের গ্লুকোজ অভাব (হাইপোগ্লাইসেমিয়া) সৃষ্টি করতে পারে। এটি শিশুর ঘাম,কম্পন, অজ্ঞান হওয়া এবং অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- নবজাতকের শ্বাসকষ্ট: গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নবজাতকের শ্বাসকষ্ট (অ্যাস্ফিক্সিয়া) সৃষ্টি করতে পারে। এটি শিশুর নীলচে ত্বক, বুকে চাপ, এবং অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- নবজাতকের জন্ডিস: গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নবজাতকের জন্ডিস (জন্ডিস) সৃষ্টি করতে পারে। এটি শিশুর ত্বক, চোখ এবং মল হলুদ হয়ে যায়।
- নবজাতকের চোখের সমস্যা: গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নবজাতকের চোখের সমস্যা (রেটিনোপ্যাথি) সৃষ্টি করতে পারে। এটি শিশুর দৃষ্টি সমস্যা হতে পারে।
- নবজাতকের হার্টের সমস্যা: গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নবজাতকের হার্টের সমস্যা (কার্ডিওময়োপ্যাথি) সৃষ্টি করতে পারে। এটি শিশুর হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া ফলে হার্টের ব্যথা, এবং অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- বংশগত: যদি আপনার পরিবারে ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে আপনার ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
- কিছু ওষুধ: কিছু ওষুধ, যেমন কর্টিকোস্টেরয়েড, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
- কিছু সংক্রমণ: কিছু সংক্রমণ, যেমন রুবেলা, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আপনি যা করতে পারেন
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি গর্ভবতী মা এবং শিশু উভয়ের জন্যই ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। তবে এটি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আপনি যদি গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নির্ণয় করেন, তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন এবং তাদের পরামর্শ অনুসরণ করুন। ডাক্তার আপনাকে আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করতে এবং আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য পরামর্শ দিতে পারেন।
Read More:ডায়াবেটিস এ রেয়ার রিমেডি হোমিওপ্যাথিতে
- স্বাস্থ্যকর খাবার খান: আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং আপনার সন্তানের স্বাস্থ্যের জন্য, আপনাকে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। এটি মানে হল যে আপনি প্রচুর ফল, শাকসবজি, whole grains এবং lean protein খান। এটি অতিরিক্ত চিনি, চর্বি এবং সোডিয়াম এড়ানো।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন: ব্যায়াম আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করতে পারে। গর্ভবতী মহিলাদের প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০মিনিট মাঝারি-তীব্রতার ব্যায়াম করা উচিত।
- আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন: যদি আপনি অতিরিক্ত ওজন বা স্থূল হন, তাহলে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে আপনি স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে পারেন এবং নিয়মিত ব্যায়াম করতে পারেন।
উপসংহার
মোট ডায়াবেটিস রোগীর প্রায় নব্বই শতাংশই টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। বাকি দশ শতাংশ প্রাথমিকভাবে টাইপ-১ ডায়াবেটিস ও জেস্টেশনাল বা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস প্রতিরোধের জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, যেমন স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা, নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং গর্ভাবস্থার আগে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের পরীক্ষা করা। আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন যাতে আপনি আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন এবং আপনার শিশুকে সুস্থ জন্ম দিতে পারেন। গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস একটি জটিল সমস্যা, তবে এটি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
পরিশেষে বলতে চাই
পরিশেষে বলতে চাই যেসব সতর্কতা আপনার জরুরী তা মেনে চলুন। হোমিওপ্যাথিতে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের অত্যন্ত ফলপ্রসূ চিকিৎসা রয়েছে। লক্ষণ অনুযায়ী সঠিক ওষুধ নির্বাচন হলে হোমিওপ্যাথিতে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের অধিকাংশ সমস্যাই সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব এবং এর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই এবং সারা জীবন ঔষধ খেয়ে যেতে হয় না। প্রয়োজন শুধু ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলা। যাতে আপনি আপনার অবস্থার জন্য সর্বোত্তম চিকিৎসা পান।
আপনি যদি আমার ব্লগটি ভালভাবে পড়ে থাকেন তাহলে গর্ভাবস্থা ও ডায়াবেটিস: যেসব সতর্কতা আপনার জরুরী এই সম্পর্কে নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন।
আমি আসলে চেষ্টা করেছি সহজে আপনাদেরকে বুঝাতে যে,গর্ভাবস্থা ও ডায়াবেটিস: যেসব সতর্কতা আপনার জরুরী এই সম্পর্কে জানাতে। আমার এই ব্লগ যদি আপনাদের কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানান অথবা যে টপিক সম্পর্কে জানতে চান অনুগ্রহপূর্বক আমাকে কমেন্ট করুন। সোশ্যাল মিডিয়াতে অথবা আমার পেজে। আমি চেষ্টা করব আপনাদের মনের মত করে উত্তর দেওয়ার জন্য। ধৈর্য ধরে এতক্ষন আমার সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
Resources:
1 thought on “গর্ভাবস্থা ও ডায়াবেটিস যেসব সতর্কতা আপনার জরুরী ”
Comments are closed.