মাইগ্রেনের জন্য হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা এবং মুক্তির উপায়

মাইগ্রেনের জন্য হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা এবং মুক্তির উপায়- মাইগ্রেন একটি জটিল স্নায়বিক সমস্যা। কিছু মাথাব্যথা সত্যিই অসহনীয়। ‘ইন্টারন্যাশনাল হেডেক সোসাইটি’ জানিয়েছে যে, মাথাব্যথার পেছনে ৩১৬টিরও বেশি কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে ভোগান্তির কারণ হলো মাইগ্রেন।

সহজে ছাড়েও না, সহজে সারেও না, এটাই প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতির উপলব্ধি। কিন্তু হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় অনেকেই মাইগ্রেন থেকে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেন। চলুন, মাইগ্রেন ও তার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।

প্রথমেই জেনে নেই কি কি টপিক নিয়ে আলোচনা করব- মাইগ্রেন কী?Hemicrania/Migraine, মাইগ্রেনের হোমিও ঔষধ, মাইগ্রেনের লক্ষণ, মাইগ্রেন কেন হয়? মাইগ্রেনের ধরণ ও উপসংহার।  

মাইগ্রেনের জন্য হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা এবং মুক্তির উপায়
মাইগ্রেনের জন্য হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা এবং মুক্তির উপায়

 

মাইগ্রেন কি?Hemicrania/Migraine

সাধারণ ভাষায় মাইগ্রেনকে বলা হয় “আধকপালি ব্যথা”। ‘ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অফ নিউরোলজি’-র সংজ্ঞা অনুযায়ী, এটি এমন এক সমস্যা যেখানে বারবার মাথাব্যথা হয়, সাথে বমিভাব, আলো ও শব্দ সহ্য করতে না পারা, ঝাপসা দেখা, ক্ষুধামন্দা, ঝিনঝিন করা, এক জিনিস দু’টো দেখা, মন খারাপ লাগা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়।

আক্রান্ত ব্যক্তি স্বাভাবিক কথাবার্তাও সহ্য করতে পারেন না। অন্ধকার ঘরে একা থাকতে পছন্দ করেন। সাধারণত এক থেকে তিন দিন পর্যন্ত এই ব্যথা স্থায়ী হতে পারে এবং অনেক সময় বমি করলে কিছুটা আরাম পাওয়া যায়।

Read more:হোমিওপ্যাথি কোন রোগের কি ঔষধ

মাইগ্রেনের হোমিও ঔষধ

যেহেতু মাইগ্রেনের সঠিক কারণ এখনো পরিষ্কারভাবে জানা যায়নি, তাই এর চিকিৎসাও কিছুটা জটিল। আধুনিক চিকিৎসায় ব্যথানাশক ঔষধ, ফ্লুনারাজিন, বিটা ব্লকার বা অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট দিয়ে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, তবে সম্পূর্ণ আরোগ্য পাওয়া কঠিন।

তবে হোমিওপ্যাথিতে অনেক সময় ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। রোগীর লক্ষণ অনুযায়ী উপযুক্ত ঔষধ নির্বাচন করলে মাইগ্রেন থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

যেমন, শুধুমাত্র রবিবার বা ছুটির দিনে মাইগ্রেন হলে মেডোরিনাম ভালো কাজ করে। অনেক মাইগ্রেন রোগীর ক্ষেত্রে ন্যাট মিউর, ন্যাট কার্ব, সাইক্লামেন, পালসেটিলা, সিপিয়া উপকারী হতে পারে। অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ঔষধ গ্রহণ করাই উত্তম।নিচে কতগুলো ঔষধের লক্ষণ দেওয়া হল –

এপিফেগাস (Epiphegus) : দুর্বল মহিলাদের জন্য কার্যকরী, যারা সামান্য পরিশ্রমেই মাথাব্যথায় ভোগেন। বিশেষ করে বাঁদিকের মাথাব্যথায় উপকারী। ব্যথার সময় মুখে লালা আসে, এবং ঘুমালে ব্যথা কমে যায়।

মেনিসপারমাম (Menispermum) : মাথাব্যথার সঙ্গে অতিরিক্ত হাই ওঠে এবং মুখে লালা আসে।

মেলিলোটাস (Melilotus) : নাক থেকে রক্ত পড়লে বা মাসিকের পরে মাথাব্যথা কমে যায়। বর্ষাকালে ব্যথা বেড়ে যায়।

উসনিয়া বারবাটা (Usnea Barbata) : দপদপানি মাথাব্যথার জন্য উপকারী, যখন বেলাডোনা বা গ্লোনইনের মতো ঔষধ কাজ না করে।

ইয়ুকা ফিলামেন্টোসা (Yucca Filamentosa) : গ্যাস, অম্বল, মুখ তেতো লাগা, এবং লিভার সংক্রান্ত সমস্যার সঙ্গে যুক্ত মাইগ্রেনের ক্ষেত্রে কার্যকরী।

আইরিস ভার্স (Iris Vers) : লিভারের সমস্যার কারণে মাথার ডান দিকে বেশি ব্যথা হলে উপকারী।

অনসমোডিয়াম (Onosmodium) : পড়াশুনো বা চোখের উপর চাপ পড়লে মাথার বাঁদিকে মাইগ্রেন হলে কার্যকরী।

ইন্ডিয়াম (Indium) : পায়খানা করার সময় মাথাব্যথা হলে, ঘুমঘুম ভাব থাকলে এবং সকাল ১১টার দিকে প্রচণ্ড ক্ষুধা লাগলে উপকারী।

ফেরাম পাইরোফস (Ferrum Pyrophos) : অতিরিক্ত রক্তস্রাবের পর মাথাব্যথায় সাহায্য করে।

ওলিয়াম অ্যানিমেলি (Oleum Animale) : মাথাব্যথার সময় ঘন ঘন প্রস্রাব হলে উপকারী।

ল্যাক ডিফ্লোর (Lac Deflor) : মাথাব্যথার সঙ্গে প্রচুর প্রস্রাব, বমি ও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে কার্যকরী। মাইগ্রেনের সময় চোখে অন্ধকার দেখলেও ভালো কাজ করে।

অ্যানাজাইরিস ফেটিডা (Anrgyris Foetida) : মহিলাদের মাসিক বন্ধ হয়ে গেলে যদি মাথাব্যথা হয়, তবে এটি সহায়ক হতে পারে।

Belladonna (বেলাডোনা): মাথায় রক্ত জমে যায়, বিকেল থেকে যন্ত্রণা বাড়ে। আলো ও শব্দ সহ্য হয় না।

Arsenicum Album(আর্সেনিকাম অ্যালবাম): বাম চোখের ওপরে দপদপানি ব্যথা, চুঁইয়ে পড়ার মত যন্ত্রণা, অস্থির ভাব, তীব্র পিপাসা, বমি ভাব ও বমি। ঠান্ডা জল দিলে কিছুটা আরাম হয়।

Natrum Muriaticum (নেট্রাম মিউরিয়াটিকাম): ভোর থেকে ব্যথা বাড়ে, বিছানা ছেড়ে হাঁটাচলা করলে উপশম হয়। কাশলে মাথা ধরে, কাশি দিলে ব্যথা বেড়ে যায়।

Sanguinaria (স্যাংগুইনারিয়া): ডান কপালে ব্যথা, সকাল থেকে শুরু হয়ে দুপুরে তীব্র হয়। বমি ভাব থাকে। ঠান্ডা অনুভূতি হয়।

Nux Vomica (নাক্স ভোমিকা): ঘুম থেকে উঠে মাথা ধরে এবং দিনভর বাড়ে। পেরেক ঢুকানোর মতো যন্ত্রণা, মানসিক পরিশ্রম বা বিশ্রামে ব্যথা বেড়ে যায়।

Spigelia (স্পাইজেলিয়া): সাময়িক তীব্র ব্যথা, চোখে টানটান বেদনা, দেখতে অসুবিধা হয়, চোখের দৃষ্টি দুর্বল হয়ে পড়ে।

Silicea (সাইলিশিয়া): মাথায় ব্যথা বাড়লে মাথায় হাত দিতেও ভয় পায়, এমনকি চুল স্পর্শ করতেও। কথা বললে বা মানসিক পরিশ্রমে বাড়ে, অন্ধকার ঘরে আরাম লাগে।

Triticum (ট্রাইকনিনাম): মাথায় অস্থিরতা ও তীব্র উত্তেজনা। চোখে উত্তাপ, কর্ণনাদ ও মাথা ঘোরা। মাথার চামড়ায় যন্ত্রণা ও চুলকানি।

Pulsatilla (পালসেটিলা):  মাথার চারপাশে ঘোরে এমন যন্ত্রণা। দাঁত পর্যন্ত ব্যথা ছড়ায়। খোলা বাতাসে উপশম। ডান কপাল থেকে শুরু হয়। চোখ দিয়ে গরম জল পড়ে।

Cannabis Indica (ক্যানাবিস ইন্ডিকা): মনে হয় মাথার ঢাকনা খুলছে আবার লাগছে। সময় ও স্থানের অনুভূতি বদলে যায়। মাথার পেছনে দপদপানি, পেট ফাঁপার সঙ্গে মাথাব্যথা।

Duboisia (ডিউবোসিয়া): চোখ বন্ধ করে দাঁড়াতে পারে না। চোখে ব্যথা, চোখের তারা বড় হয়ে যায়। স্মৃতি দুর্বল, লাল লাল দাগ চোখে ভাসে।

Ipecacuanha (ইপিকাকুয়ানহা): বমি বা বমি ভাব প্রধান লক্ষণ। মাথা যেন থেঁতলানো লাগছে, চোখ লাল হয়ে যায়। ব্যথা দাঁত ও জিহ্বায় ছড়ায়।

Iris Versicolor (আইরিস ভার্সিকালর): কপালে ব্যথা ও বমি। ত্বকে টান অনুভব হয়। ডান কানপাশ বিশেষভাবে আক্রান্ত। বিশ্রামে ব্যথা বাড়ে।

Platina (প্লাটিনা): নারীদের জন্য উপযোগী। স্পর্শে অসাড়তা, শরীরে কাঁপুনি। ব্যথা ধীরে ধীরে বাড়ে ও কমে। অল্প জায়গায় গভীর যন্ত্রণা হয়।

Sulphur (সালফার): মাথার উপরে উত্তাপ ও ভারভাব। আঘাত লাগার মত যন্ত্রণা, নিচু হলে বাড়ে। চোখে জ্বালা, কানে শব্দ। অন্য ঔষধ কাজ না করলে এটা উপকারী।

Thuja (থুজা): মাথায় পেরেক ঢুকছে এমন অনুভূতি। বাম পাশে ব্যথা। চোখে প্রদাহ ও চোখের পাতায় যন্ত্রণা। চিবোলে কানে শব্দ হয়।

Ceanothus Americanus(সিয়ানোথাস)

উদাসীনতা ও মনোযোগের অভাব। চোখ, নাক, কপালে ব্যথা। চোখের সাদাংশ হলদেটে। নির্দিষ্ট সময়ে মাথাব্যথায় কার্যকর।

Gelsemium (জেলসিমিয়াম): পেছনের দিক থেকে ব্যথা শুরু হয়। মাথায় ভারভাব, যেন ফিতা দিয়ে বাঁধা। চোখ ভারী, চোখে দেখা যায় না। মাথা উঁচু রাখলে উপশম হয়।

Veratrum Viride (ভিরেট্রাম ভিরিডি): মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চয়, তীব্র মাথাব্যথা। চোখ লাল, মুখ ফুলে যায়। ঘাড়ে ব্যথা, মাথা তুলতে পারে না। ধমনির দপদপানি, মাথা ঘোরা ও বমি ভাব।

মাইগ্রেনের জন্য হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা এবং মুক্তির উপায়
মাইগ্রেনের জন্য হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা এবং মুক্তির উপায়

 

মাইগ্রেনের লক্ষণ

মাইগ্রেন সাধারণত চারটি পর্যায়ে ঘটে, যদিও সবার ক্ষেত্রে সবগুলো পর্যায় নাও দেখা যেতে পারে।

. প্রোড্রোম (মাইগ্রেন শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা বা দিন আগে)

মেজাজের পরিবর্তন (বিরক্তি, দুঃখ বা উত্তেজনা) খাবারের প্রতি আকর্ষণ বা অরুচি, অতিরিক্ত তৃষ্ণা অনুভব করা, ঘন ঘন হাই তোলা, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া বা ক্লান্ত লাগা।

. আভা (মাইগ্রেন শুরুর আগে, সবসময় হয় না)

চোখের সামনে ঝলমলে আলো, দাগ বা জিগজ্যাগ লাইন দেখা , মুখ বা হাতে ঝনঝন বা অসাড় লাগা , কথা বলতে অসুবিধা বা বিভ্রান্তি অনুভব করা।

. আক্রমণ (প্রধান ব্যথার পর্যায়, ৭২ ঘণ্টা স্থায়ী হতে পারে)

মাথার একপাশে বা দু’পাশে তীব্র স্পন্দিত ব্যথা, আলো (ফটোফোবিয়া) ও শব্দ (ফোনোফোবিয়া) সহ্য করতে না পারা, বমি বমি ভাব, বমি বা মাথা ঘোরা , শারীরিক কাজকর্ম করলে ব্যথা বেড়ে যাওয়া।

. পোস্টড্রোম (মাইগ্রেন কমার পরের ধাপ, একদিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে)

প্রচণ্ড ক্লান্তি, অবসাদ বা মাথা ঝাপসা লাগা , মনোযোগ কমে যাওয়া বা চিন্তা করতে কষ্ট হওয়া, কেউ কেউ হালকা স্বস্তি বা মানসিক সতেজতা অনুভব করেন।

Read more:গ্যাস্ট্রিকের হোমিও ঔষধ কার্যকর সমাধান 

মাইগ্রেনের কারণ

মাথাব্যথা আমাদের অনেকের জীবনেই কমবেশি আসে, কিন্তু মাইগ্রেন এক অন্যরকম যন্ত্রণা। এটি সাধারণ মাথাব্যথার চেয়ে অনেক তীব্র। যার প্রকৃত কারণ এখনো পুরোপুরি বোঝা যায়নি।

তবে এটি সাধারণত বংশগত, পরিবেশগত ও স্নায়বিক,দূষিত বাত, পেটের সমস্যা ,পিত্ত জনিত কারণ,কৃমি, মস্তিষ্কের বিকৃতি, টিউবারকুলার জনিত কারণ ও  বিভিন্ন কারণের ফলে হতে পারে।

ভ্রমণের সময় ক্লান্তি বা মোশন সিকনেস হলে মাইগ্রেন হতে পারে। অতিরিক্ত পরিশ্রম এবং যৌনক্রিয়ার পর মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়তে পারে।

টিউবারকুলার জনিত কারণ: টিউবারকুলার মায়াজমের রোগীদের বাল্যকালে ও যৌবনের সূচনা থেকেই এই রোগ দেখা যেতে পারে। সাধারণত এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের মাথা দেখায় আকারে বড় হয় এবং রোগী সব সময় মাথায় হাত দেয়।

আরো কিছু লক্ষণ আছে যেমন সব সময় পানি পিপাসা লেগেই আছে এবং সবসময় পানি খায়।কান দুটি উত্তপ্ত মনে হয়, মুখমণ্ডল বিশেষ করে ঠোঁট দুটি লাল বর্ণ দেখায়। এটি জটিল প্রকৃতির রোগ। সহজে আরোগ্য হতে চায় না , আরোগ্য না হলে এ রোগী ভয়ংকর পরিণতি ভোগ করে।

জিনগত কারণ: যাদের পরিবারে মাইগ্রেনের ইতিহাস আছে, তাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

স্নায়বিক সমস্যা: মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক কার্যকলাপ, বিশেষ করে ট্রাইজেমিনাল নার্ভ ও রক্তনালীর সংযোগে সমস্যা হলে মাইগ্রেন হতে পারে। এছাড়া, সেরোটোনিনের মাত্রা কম-বেশি হওয়াও ব্যথাকে প্রভাবিত করে।

হরমোনের পরিবর্তন: মাসিক, গর্ভাবস্থা বা মেনোপজের সময় ইস্ট্রোজেন হরমোনের ওঠানামার কারণে মাইগ্রেন হতে পারে।

মানসিক চাপ: অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ বা চাপ কাটানোর পর হঠাৎ শিথিল হলে মাইগ্রেন শুরু হতে পারে।

খাবার: চকোলেট, পুরনো পনির, ক্যাফেইন, এমএসজি যুক্ত খাবার, চিজ ও পনির, হটডগ ও ফাস্ট ফুড, সংরক্ষিত মাংস বা সস, বাদাম ও কিছু ফল: বিশেষ করে আঙুর, কলা, কমলা লেবু ইত্যাদি কিংবা দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকলে মাইগ্রেন হতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রেই বেশি খাওয়ার পর মাথাব্যথা শুরু হয়। তাই খাবারের ব্যাপারে সতর্ক থাকা দরকার।

ঘুমের অনিয়ম: খুব কম বা বেশি ঘুম, অথবা অনিয়মিত ঘুমের কারণে মাইগ্রেন দেখা দিতে পারে।  বা ঘুম থেকে ওঠার পর, রোদে, বৃষ্টিতে বা ঠান্ডায় বের হলে, মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়তে পারে।

পরিবেশগত কারণ: উজ্জ্বল আলো, উচ্চ শব্দ, তীব্র গন্ধ, এমনকি আবহাওয়ার পরিবর্তন (যেমন, বাতাসের চাপের ওঠানামা) মাইগ্রেনের কারণ হতে পারে।

ঔষধ: কিছু ঔষধ, যেমন গর্ভনিরোধক পিল বা রক্তনালী প্রসারণকারী ঔষধ মাইগ্রেনের সম্ভাবনা বাড়াতে পারে। যেমন র‍্যানিটিডিন, ফ্যামোটিডিন, রক্তচাপ ও হাঁপানির কিছু ঔষধ মাইগ্রেনের কারণ হতে পারে।

তবে এসব কারণ সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রভাব ফেলে না, কারো ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট কারণ মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে, আবার অন্য কারো ক্ষেত্রে তা কোনো সমস্যা তৈরি করে না। আবার কিছু মানুষ কাজের মধ্যে ভালো থাকলেও ছুটির দিনে বেশি মাথা ব্যথা অনুভব করেন।

 

মাইগ্রেন কেন হয়?

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাইগ্রেনের নির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি। তবে কিছু কারণকে দায়ী করা হয়-

. মেয়েদের বেশি হওয়ার কারণ

মাইগ্রেনে আক্রান্তদের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা ছেলেদের তুলনায় দ্বিগুণ। বিশেষ করে, মেয়েদের মধ্যে ৬০% ক্ষেত্রে এটি মাসিকের সময় হয়।

. বংশগত কারণ

একই পরিবারের একাধিক সদস্য মাইগ্রেনে আক্রান্ত হতে পারেন।

. মস্তিষ্কের রাসায়নিক ভারসাম্য

বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, মাইগ্রেন রোগীদের মস্তিষ্কে ম্যাগনেশিয়াম ও সেরোটোনিন কম থাকে, কিন্তু গ্লুটামেট বেশি থাকে। এই উপাদানগুলোর ভারসাম্য ঠিক না থাকলে মস্তিষ্কের রক্তনালীগুলো সঠিকভাবে সংকুচিত ও প্রসারিত হতে পারে না, যার ফলে মাথায় দপদপানি ব্যথা শুরু হয়।

৪. মাইগ্রেন আবহাওয়া পরিবর্তন

যখন আকাশে মেঘ করে আসে, তখন শুধু প্রকৃতিই নয়, অনেক মাইগ্রেন রোগীর মনেও যেন মেঘ জমে। এক ধরনের অদ্ভুত বিষণ্ণতা ভর করে, আর তারপর ধীরে ধীরে শুরু হয় মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব বা গা-গোলানো।

আবহাওয়ার পরিবর্তন, তাপমাত্রার ওঠানামা, কিংবা ভ্রমণের সময় উচ্চতার পার্থক্য- এসব কারণে মাইগ্রেন বেড়ে যেতে পারে। তবে শুধু এগুলোর জন্য নয়, আরও কিছু কারণ আছে যা মাইগ্রেনের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

মাইগ্রেনের জন্য হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা এবং মুক্তির উপায়
মাইগ্রেনের জন্য হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা এবং মুক্তির উপায়

 

মাইগ্রেনের ধরণ

মাইগ্রেনের লক্ষণ অনুযায়ী একে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়—

সাধারণ মাইগ্রেন: শুধু কপালে বা মাথার একদিকে ব্যথা অনুভূত হয় যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। কিন্তু কোনো পূর্বাভাস থাকে না।

মেনস্ট্রুয়াল মাইগ্রেন: নারীদের মাসিক শুরুর আগে বা পরে এই ধরনের মাইগ্রেন দেখা দেয়। এটি বেশ কয়েকদিন চলতে পারে

ক্লাসিক মাইগ্রেন: এ ধরনের মাইগ্রেন শুরু হওয়ার আগে কিছু পূর্ব লক্ষণ দেখা যায়, যেমন চোখে আলো ঝলকানো, একপাশ অবশ লাগা, বা মাথা ভারী মনে হওয়া  বা হাত-পায়ে ঝিনঝিন ভাব।

Read more:গাড়িতে উঠলে বমি বন্ধ করার উপায় ও হোমিও ঔষধ

জটিল মাইগ্রেন: এই মাইগ্রেন খুবই তীব্র হতে পারে। কোনো কোনো সময় রোগী যন্ত্রনায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারেন বা শরীরের কোনো অংশ সাময়িকভাবে অবশ হয়ে যেতে পারে।

উপসংহার 

মাইগ্রেন শুধুই একটি মাথাব্যথা নয়, এটি একটি নিরব দুর্ভোগ, যা জীবনযাত্রার স্বাভাবিক ছন্দকে থামিয়ে দিতে পারে। হোমিওপ্যাথি রোগের নামের চিকিৎসা করে না। রোগীর পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে যে ঔষধটি নির্বাচিত হয়, সে ঔষধটি দিয়ে রোগীর চিকিৎসা করে। সেখানে মাথা ব্যথাও হতে পারে, অন্য যে কোন ব্যথাও হতে পারে, অথবা যেকোনো রোগ হতে পারে।

প্রতিটি মানুষের দেহ, মস্তিষ্ক ও অনুভব ভিন্ন; সেইজন্য হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা সেই ভিন্নতাকেই গুরুত্ব দেয় বেশি। সঠিক লক্ষণ বিশ্লেষণ, সচেতন জীবনযাপন এবং ধৈর্যের সঙ্গে গ্রহণ করা চিকিৎসাই হতে পারে মাইগ্রেনমুক্ত এক শান্ত জীবনযাত্রার চাবিকাঠি।

এই ব্লগ পোস্টে ‘মাইগ্রেনের জন্য হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা এবং মুক্তির উপায়’ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি আপনাদের উপকারে আসবে।আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। ধৈর্য ধরে এতক্ষন থাকার জন্য ধন্যবাদ।প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন-

সিটি হোমিও

রূপায়ন মিলেনিয়াম স্কয়ার,দোকান নং-116
( গ্রাউন্ড ফ্লোর) -70, 70/Aপ্রগতি শরণি,
উত্তর বাড্ডা, ঢাকা 1212,বাংলাদেশ।
01736181642

 

Resources: https://www.bajajfinservhealth.in/

Share this content:

Dr. Khatun invites you to join her in this journey with City Homeo. Your engagement and encouragement are crucial in advancing this endeavor. Together, we can strive towards a healthier community and a better tomorrow.

Leave a Comment