হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা সম্পর্কিত আপনার সাধারণ প্রশ্নের উত্তরগুলি জেনে নিন অর্থাৎ আল্লাহ্ তা আলা এমন কোন রোগ সৃষ্টি করেননি যার জন্য তিনি ঔষধ পাঠাননি। -বুখারী, মুসলিম।
কি কি রোগের চিকিৎসা হোমিওপ্যাথিতে আছে?
উত্তর:- এমন কোন রোগ নেই যার চিকিৎসা হোমিওপ্যাথিতে নেই।অর্থাৎ সব রোগের চিকিৎসাই হোমিওপ্যাথিতে আছে। উদাহরণ স্বরূপ হার্ট ব্লক,হার্ট স্ট্রোক, হার্ট বড় হওয়া,ব্রেইন টিউমার, ব্রেইন স্ট্রোক,মাইগ্রেন,মাথা ব্যথা,মাথা,ঘোরা,অর্শ/গেজ, ফিস্টুলা/ভগন্দর, হাঁপানী, মগী, ধনুষ্টঙ্কার, ডায়াবেটিস, ক্যানসার,আমাশয়, কোষ্ঠকাঠিন্য, সব ধরনের এলার্জি,ঘন ঘন সর্দি লাগা, সাইনোসাইটিস, টনসিলাইটিস, অ্যাপেন্ডিসাইটিস,নাকের পলিপাস,নাক ডাকা,হাই প্রেসার,লো প্রেসার, অনিদ্রা কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়া,গ্যাসট্রিক।
বুক জ্বালা; হাত, পা ও মাথার তালুতে জ্বালা, মাথার তালু সব সময় গরম থাকা,অস্থিরতা, বুক ধড়ফড় করা,দুর্বলতা,গ্যাংগ্রীন,নেক্রোসিস,হাড় ভাঙ্গা,স্টমাক আলসার,স্টমাক ক্যানসার, পেপটিক আলসার,কোন ক্ষত যা সহজে শুকাতে চায়না,শরীর অত্যধিক মোটা অথবা অত্যধিক চিকন হয়ে যাওয়া, আইবিএস (IBS), কোলন ক্যানসার,নতুন কিংবা পুরাতন সব ধরনের বাত,সব ধরনের ব্যথা যেমন: গিরায় গিরায় ব্যথা,হাঁটু ব্যথা,কোমর ব্যথা,মেরুদন্ডের ব্যথা,তলপেটে ব্যথা।
প্যারালাইসিস,খিঁচুনী,ব্রণ,মেসতা,মুখে ঘা,মুখে দুর্গন্ধ,সব ধরনের চর্ম রোগ,হাড় ক্ষয় হয়ে যাওয়া,হাড় বেড়ে যাওয়া,ক্ষুধাহীনতা, স্বাস্থ্যহীনতা,ছুলি, মানসিক রোগ যেমনঃ আত্মহত্যা প্রবণতা, পাগল হওয়া,ভয় পাওয়া,ভয় পেয়ে রোগ,প্রস্রাবের নানা সমস্যা যেমন: প্রস্রারাব কম হওয়া,প্রস্রাব ঘন ঘন হওয়া, প্রস্রাবে জ্বালা পোড়া,প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া,শরীরের যে কোন দ্বার যেমন: নাক দিয়ে, মুখ দিয়ে, কান দিয়ে, চোখ দিয়ে, ঠোট দিয়ে, প্রশ্রাবের রাস্তা দিয়ে,পায়খানার রাস্তা দিয়ে রক্ত পড়া,প্রস্টেট গ্ল্যান্ড বড় হওয়া, প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের ক্যানসার,কিডনী, লিভার ও হার্টের সব ধরনের রোগ। যেমন:-
Read More:প্রস্রাবের সমস্যা সার্সাপেরিলা
পিত্ত ও কিডনীর পাথর,হেপাটাইটিস বি ভাইরাস,জন্ডিস,ফ্যাটি লিভার, ফ্যাটি হার্ট,জনন যন্ত্রের যা বতীয়রোগ বা যৌন রোগ,হাত ও পায়ের দুর্গন্ধ ঘাম,মহিলাদের যাবতীয় রোগ যেমন: বন্ধ্যাত্ব,অনিয়মিত মাসিক,বাধক বেদনা,সাদাস্রাব,ব্রেস্ট টিউমার,ব্রেস্ট ক্যানসার,জরায়ুর টিউমার, ক্যানসার,সিস্ট,পলিপ, হিস্টিরিয়া, হরমোনগত সমস্যা,থাইরয়েডের সমস্যা,গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাব,বমি করা ও কিছু খেতে না পারা, শিশুদের সব ধরনের রোগ।
যেমন: শিশুদের বিছানায় প্রস্রাব করা, শিশুদের শীর্ণতা,শিশুরা খেতে চায়না,শিশু সারাক্ষণ কান্না করে,বয়স অনুপাতে শিশুর শারীরিক বা মানসিক বিকাশ কম, শিশুর মাথায় অতিরিক্ত ঘাম হওয়া,শিশু অত্যন্ত বদ মেজাজী, শিশু যত খায় তত শুকায় ইত্যাদি।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা
প্রশ্ন-২ঃ কিভাবে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করা হয়?
উত্তর: হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে রোগীর সমস্ত রোগের চিকিৎসাই এক যোগে করা হয় এবং আলাদা আলাদা রোগের জন্য আলাদা আলাদা চিকিৎসক দরকার হয়না। এ উদ্দেশ্যে রোগীর জন্য প্রথমেই একটি কেইস রেকর্ড (Case record) তৈরী করতে হয়। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করতে প্রথম দিন চিকিৎসক এবং রোগী উভয়েরই একটু বেশী সময় ওধৈর্যের প্রয়োজন হয়।
রোগীর রোগ নির্ণয় ও ঔষধ নির্বাচনের জন্য রোগীর কেইস রেকর্ড তৈরী কালীন সময়ে রোগীর কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সংগ্রহকালে চিকিৎসক রোগীকে যে সমস্ত প্রশ্ন করেন সে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর যদি রোগী তাঁর চিকিৎসককে যথাযথ ভাবে প্রদান করেন তাহলে একটি কেইস রেকর্ড তৈরী করতে একজন চিকিৎসকের সর্বনিম্ন ১০ মিনিট থেকে সর্বোচ্চ ৩০মিনিট সময়ের প্রয়োজন হয়। এরপর আর এত সময় দরকার হয়না।
বুঝবার সুবিধার্থে তুলনামূলকভাবে বলা যায়, অ্যালোপ্যাথিতে রোগীর জন্য ঔষধ নির্বাচনের নিমিত্তে যে পদ্ধতিতে কেইস রেকর্ডও ঔষধ নির্বাচন করা হয় সেই পদ্ধতিকে বলা হয় ডায়াগনোসিস (Diagnosis) যেখানে লক্ষণসমূহের গুরুত্ব কম, প্যাথলজির গুরুত্বই বেশী। অপরপক্ষে হোমিওপ্যাথিতে যে পদ্ধতিতে রোগীর কেইস রেকর্ড ও ঔষধ নির্বাচন করা হয় সেই পদ্ধতিকে বলা হয় অ্যানামনেসিস (Anammesis) যেখানে রোগীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে যে লক্ষণসমূহ সংগ্রহ করা হয়। সেই লক্ষণসমূহের গুরুত্বই বেশী,প্যাথলজির গুরুত্ব কম।
অর্থাৎ রোগীর রোগ নির্ণয়ের জন্য অ্যালোপ্যাাথিতে ডায়াগনোসিসের গুরুত্ব বেশী আর হোমিওপ্যাথিতে লক্ষণের গুরুত্ব বেশী। আর তাই হোমিওপ্যাথিতে চিকিৎসা প্রার্থীগণ যদি চিকিৎসককে লক্ষণ সংগ্রহের ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা করেন তাহলে ঔষধ নির্বাচন করা চিকিৎসকের পক্ষে অধিকতর সহজ হয় এবং রোগীকে ঔষধ দেওয়ার পর কয়েক মুহূর্ত থেকে কয়েক ঘন্টা বা অত্যন্ত জটিল রোগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ কয়েক দিনের মধ্যেই রোগী বলতে পারেন যে,ঔষধের কাজ শুরু হয়ে গেছে এবং রোগ লক্ষণসমূহও দূর হতে শুরু করেছে।
সুতরাং হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার সুবিধা হচ্ছে একদিকে যেমন একই সাথে রোগীর সব রোগলক্ষণ সমূহের চিকিৎসা করা সম্ভব হয়। অন্যদিকে তেমনি তাঁর রোগলক্ষণসমূহ স্থায়ীভাবে আরোগ্য হয়।এ জন্য দরকার দক্ষ ও অভিজ্ঞ চিকিৎসক এবং সঠিক হোমিওপ্যাথিক ঔষধ। আর রোগীর দায়িত্ব হচ্ছে চিকিৎসকের উপর আস্থা রেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যয় বহন করে চিকিৎসক কর্তৃক নির্দেশিত নিয়ম কানুন মেনে চিকিৎসা গ্রহণ করা।
প্রশ্ন-৩: লোকমুখে শোনা যায় যে, যে রোগের চিকিৎসা কোথাও পাওয়া যায়না সে রোগের চিকিৎসাও হোমিওপ্যাথিতে আছে,কথাটি কতটুকু সত্য?
উত্তর: কথাটি পুরোপুরিই সত্য,কারণ আগেই বলা হয়েছে যে, সব রোগের চিকিৎসাই হোমিওপ্যাথিতে আছে। অর্থাৎ যে রোগের চিকিৎসা কোথাও নেই সে রোগের চিকিৎসা হোমিওপ্যাথিতে আছে।
এ কারণেই প্রবাদে আছে,“যার নেই কোন গতি তার জন্য হোমিওপ্যাথি।”
অর্থাৎ যে রোগী কোথাও চিকিৎসা পাননি এবং তাঁর রোগ আরোগ্যের আর কোন উপায় নেই, হতাশ হয়ে পড়েছেন। তাঁর চিকিৎসা হোমিওপ্যাথিতে আছে। তবে রোগীর রোগ আরোগ্য সীমার মধ্যে থাকতে হবে। সব কিছুরই যেমন একটা সীমা আছে রোগের আরোগ্যেরও তেমনি সীমা আছে।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা
প্রশ্ন-৪: সাধারণত শোনা যায় যে, হোমিওপ্যাথিক ঔষধ আস্তে আস্তে কাজ করে কিন্তু রোগকে ভিতর থেকে পরিপূর্ণভাবে নির্মূল করে,কথাটি কতটুকু সত্য?
উত্তর: কথাটি পরিপূর্ণ ভাবে সত্য নয়,আংশিক সত্য। কারণ রোগ আরোগ্য হতে সময় লাগে রোগের বয়স অনুপাতে। যে রোগের বয়স বেশী সে রোগ আরোগ্য হতে সময় তুলনামূলক ভাবে বেশী লাগবে। আবার যে রোগের বয়স কম সে রোগ আরোগ্য হতে সময় তুলনামূলক ভাবে কম লাগবে।
যে রোগের বয়স মাত্র কয়েক ঘন্টা অথবা কয়েক দিন সে রোগ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় কয়েক ঘন্টা বা কয়েক দিনের মধ্যেই আরোগ্য হবে। যেমনঃ জ্বর কয়েক ঘন্টা অথবা কয়েক দিনের মধ্যেই সেরে যাবে। আবার ডায়াবেটিস যেহেতু দীর্ঘ দিনের রোগ কাজেই তা আরোগ্য হতে তিন মাস হতে এক/দুই বছর অথবা দুই/আড়াই বছর লাগতে পারে। তবে রোগীর রোগ নূতন বা পুরাতন যেটিই হোকনা কেন ঔষধ সেবন শুরু করা মাত্রই আরোগ্য শুরু হবে এবং রোগীও তা অনুভব করতে সক্ষম হবেন। এক কথায়,রোগীর রোগ সারতে রোগের বয়সের অনুপাতে সময় লাগবে।
হোমিওপ্যাথিতে রোগ স্থায়ীভাবে আরোগ্য হয়
প্রশ্ন-৫: আমরা ছোট সময় থেকেই শুনে আসছি যে, হোমিওপ্যাথিতে রোগ স্থায়ীভাবে আরোগ্য হয়। কথাটি কতটুকু সত্য?
উত্তর: প্রশ্নটির উত্তর যদিও উপরে দেয়া হয়েছে তারপরও বলা হচ্ছে যে, রোগী যদি ধৈর্য ধরে চিকিৎসকের পরামর্শমত চিকিৎসা গ্রহণ করেন এবং একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তা চালিয়ে যান তাহলে কথাটি শতভাগ সত্য কারণ যাঁরা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নিয়ে অভ্যস্ত তাঁরা অবশ্যই জানেন যে,সঠিক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় রোগ স্থায়ীভাবে আরোগ্য হয়।
প্রশ্ন-৬: দূরবর্তী যে সমস্ত রোগী বার্ধক্য বা অন্য বিশেষ কোন কারণে আপনাদের কাছে আসতে সক্ষম নয় তাঁদেরকে কি আপনারা বিশেষ কোন উপায়ে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন?
উত্তর: অনেকেই এ প্রশ্ন করে থাকেন যে, রোগী না দেখে ঔষধ দেয়া যায় কিনা।এ প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে হ্যা রোগীর সাথে ফোনে কথা বলে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দেয়া যায় যদিও চিকিৎসকের কাছে দেখা করে চিকিৎসা নেয়াই উত্তম।
বার বার আসতে না পারলেও কমপক্ষে প্রথমে এক বারের জন্য হলেও আসা উচিত। এভাবে প্রথমবার ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসা নিয়ে গেলে এর পর থেকে রোগীর সাথে ফোনে কথা বলে রোগীকে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ঔষধ পাঠানো যায়। তবে তা অবশ্যই রোগীর বিশেষ জটিল অবস্থার কারণে।
প্রশ্ন-৭: চিকিৎসায় সবচেয়ে ভাল ফল পেতে হলে রোগীর করণীয় কি?
উত্তর চিকিৎসায় সবচেয়ে ভাল ফল পেতে হলে রোগীর প্রধান কর্তব্য হচ্ছে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করা ও সেই সঙ্গে আনুসঙ্গিক অন্যান্য নির্দেশনাবলী মেনে চলা।