সেহরি ও ইফতারের খাবার কেমন হওয়া উচিত- আজ আমরা এমন একটি টপিক নিয়ে আলোচনা করব, যারা রোজা থাকেন তাদের জানা অত্যন্ত জরুরী।
আজকের আলোচনায় তুলে ধরব – ইফতার কি? স্বাস্থ্যকর ও পরিপূর্ণ ইফতার, ইফতারে সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার কোনটি? ইফতারে খাবারের পরিমাণটা কেমন হবে, ইফতারিতে যে খাবারগুলো খেলে বিপদ হতে পারে, ইফতারের যে খাবার গুলো খেলে সমস্যা হয়, ইফতারে বিশেষ সতর্কতা, সেহেরী কি? সেহরিতে কি খাওয়া উচিত? সেহেরী খাবার পরিমাপটা কেমন হবে, সেহরির জন্য উপকারী খাবারগুলোর তালিকা।
কোন খাবারগুলো এড়িয়ে চলবেন কারণ রোজার সময় আমাদের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়াটা অত্যন্ত জরুরী।সেহরি ও ইফতারের খাবার অনেক বেশি রাখা ঠিক নয়।
তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেহরি ও ইফতারের খাবার কেমন হওয়া উচিত।

ইফতার কি?
ইফতার হলো সারাদিন রোজা রেখে (ফজরের আজানের পর থেকে মাগরিবের নামাজের আগ পর্যন্ত) যখন মাগরিবের নামাজের আযান দেয় তখন কিছু খাবার খাওয়া।
এটি মুসলমানদের ধর্মীয় রীতিনীতি। রোজা রাখা ইসলাম ধর্মে ফরজ।
স্বাস্থ্যকর ও পরিপূর্ণ ইফতার
ইফতার শুরু করুন ১-৩টি খেজুর ও শরবত দিয়ে। কারণ শরবত আমাদের সারা দিনের পানির অভাব এবং ক্লান্তি দূর করে। শরবতটা সাধারণত ফলের রস ইসুবগুলের ভুষি বা তোকমা, লেবু-নারকেল পানির দিয়ে তৈরি করা যেতে পারে।
কিন্তু কোমল পানিও বা কোল্ড ড্রইংস বা এনার্জি ড্রিঙ্কস ইফতারিতে একেবারেই রাখবেন না। এতে প্রচুর ক্ষতি বয়ে আনবে। খেজুর আমাদের কর্মশক্তি এবং হজম শক্তি বাড়ায়।
Read more:ভেরিকোসিল এর হোমিও ঔষধ
ইফতারে সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার কোনটি?
ইফতারে কাঁচা ছোলা, পুদিনা পাতা ও অল্প লবণ দিয়ে মেখে খেতে পারেন। এটা স্বাস্থ্যের জন্য এবং হজমের জন্য খুবই উপকারী। এতে কোলেস্ট্রল কমবে।
ইফতারে খাবারের পরিমাণটা কেমন হবে
ইফতারে খাবারের পরিমাণটা হবে –প্রতিদিন যে আমরা সকালের নাস্তা খাই, তার সমান। ইফতারে অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে হজমের সমস্যা হতে পারে, ঘুমেরও ব্যাঘাত ঘটবে। ধীরে ধীরে খাবার খান এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, ফাইবারযুক্ত স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন।

ইফতারিতে যে খাবারগুলো খেলে বিপদ হতে পারে
ইফতারে অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে হজমের সমস্যা ও ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে। তাই ভুল খাবার খেলে তা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
ইফতারের যে খাবার গুলো খেলে সমস্যা হয়
ইফতারের যে খাবার গুলো খেলে সমস্যা হয় তা নিম্নে দেওয়া হলো –
১. অতিরিক্ত চিনি ও মিষ্টি খাবার – রোজার সময় শরীর স্বাভাবিক ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকে যা শরীর থেকে বিষাক্ত ভারী ধাতু পদার্থ সরিয়ে দেয়।
ইফতারিতে অতিরিক্ত মিষ্টি খেলে রক্তে গ্লুকোজের আকস্মিক বৃদ্ধি ঘটে , যেটা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি করতে পারে।
আবার কোমল পানীয় বা বাজারে প্রচলিত যে শরবতগুলো আছে সেগুলোতে ডিহাইড্রেশন বাড়িয়ে দেয় এবং দ্রুত ক্লান্তি তৈরি করে।
২. ভাজাপোড়া ও অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার – যেমন: পেঁয়াজু, বেগুনি, চপ,চিকেন ফ্রাই , কাবাব প্রভৃতি খাবারে অ্যাডভান্সড গ্লাইকেশন এন্ড প্রোডাক্টস (AGEs) নামে এক ধরনের ক্ষতিকর যৌগ তৈরি করে।এর ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি এবং বয়সের বৃদ্ধির হার বাড়িয়ে দেয়।
গ্যাসের এবং পেটের নানার সমস্যার সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত তৈলাক্ত তৈলাক্ত খাবারে শরীরের ভালো কোলেস্টেরল (HDL) কমিয়ে দেয় এবং খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) বাড়িয়ে দেয়, যার জন্য হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
Read more:সার্সাপেরিলা হোমিও ঔষধ
৩. অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার ও রিচফুট জাতীয় খাবার – এই জাতীয় খাবার খেলে শরীর এ পানি শূন্যতা দেখা দেয়, ফলে রাতেই তৃষ্ণার্ত হয়ে ওঠে এবং শরীরে ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য নষ্ট হয়।
এ খাবারগুলোতে রক্তচাপ দ্রুত বাড়িয়ে দেয়, যা হঠাৎ মাথা ঘোরা বা দুর্বলতা তৈরি করতে পারে।
৪. চা, কফি, এনার্জি ড্রিংকস – ইফতার বা তারাবির আগে কফি পান করলে তা মেলাটোনিন হরমোনের নিঃসরণ বাধাগ্রস্ত করে, ফলে ঘুমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৫. সাদা পাউরুটি, ময়দার তৈরি খাবার – এসব খাবারে কোনো ফাইবার না থাকায় এগুলো দ্রুত হজম হয়ে যায় এবং প্রচুর ক্ষুধার সৃষ্টি করে।
ইফতারে বিশেষ সতর্কতা
নিম্নলিখিত কাজগুলো কিছুতেই করা যাবে না। করলে হজমের সমস্যা, পেট ফাঁপা এবং অ্যাসিডিটির কারণ হতে পারে।
- খালি পেটে কোল্ড ড্রিঙ্ক পান করা
- অতি দ্রুত খাওয়া
- ইফতার শেষে বেশি পানি পান করা
সেহেরী কি?
রাতের শেষ ভাগে ইসলাম ধর্মের রীতিনীতি মেনে নিয়ে খাবার খাওয়াকে সেহরি বলে।রোজার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে সেহেরী।
সেহরিতে কি খাওয়া উচিত?
সেহরিতে এমন খাবার খাওয়া উচিত যা দীর্ঘ সময় ধরে শক্তি বজায় থাকবে এবং পানিশূন্যতা প্রতিরোধ করবে। চলুন সেহরিতে কি খাব এবং কি খাব না – তা জেনে নেই। সেহরিতে না খেয়ে রোজা রাখা কিছুতেই ঠিক না।
সেহরির সময় কিছু না কিছু খেতেই হবে, না হলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হবে। আবার সেহেরিতে কম খাওয়া যাবে না। সেহেরিতে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। সেহেরি খাবারের প্রতি অবহেলা করা যাবে না। তবে গুরুপাক খাবার খাওয়া যাবেনা।
সেহেরী খাবার পরিমাপটা কেমন হবে
সেহেরী খাবার পরিমাপটা হবে- খাবার পরিমাপটা হবে দুপুরে যতটুকু খাবার খায় ঠিক তেমন। দুপুরে খাবারের মধ্যে আমরা ভাত বা রুটি খাই। সাথে দুধ বা দই রাখাটা ভালো।
সব সময় টাটকা ও সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন। এড়িয়ে চলুন – বাসি পচা খাবার, ভাজাপোড়া ও অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার।

সেহরির জন্য উপকারী খাবারগুলোর তালিকা
সেহরিতে এমন খাবার খাওয়া উচিত যা দীর্ঘ সময় ধরে শক্তি বজায় থাকবে এবং পানিশূন্যতা প্রতিরোধ করবে। সেহরির জন্য উপকারী খাবারগুলোর তালিকা নিচে দেওয়া হলো:
- কার্বোহাইড্রেটসমৃদ্ধ খাবার – দীর্ঘক্ষণ শক্তি শক্তির জন্য চিয়া সিড এবং ওটমিল মিশিয়ে দই বা দুধে ভিজিয়ে খেতে পারেন।
- উচ্চ-প্রোটিনযুক্ত খাবার – পরোটার পরিবর্তে ডাল ও চিয়া সিড মিশিয়ে তৈরি পরোটা উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবারের কাজ করে।
- শক্তির উৎস্ জাতীয় খাবার- দইয়ে আমন্ড, আখরোট এবং মধু মিশিয়ে খেলে এটি প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর শক্তির উৎস্য পাওয়া যায়।
- পানিশূন্যতা প্রতিরোধি খাবার – তরমুজ ও নারকেলের পানি। শশা ও দই একসাথে খেলে এটি শরীর ঠান্ডা রাখে এবং পানিশূন্যতা রোধ করে।
- স্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত খাবার – অ্যাভোকাডো, ডুমুর, তিলের পেস্ট ও খেজুর খেলে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে।
- খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ- সজনে পাতা – এটি ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ, যা সেহরির জন্য একটি দুর্দান্ত উপকারী।
- জিংক, আয়রন এবং ওমেগা-৩ – কুমড়ার বীজ ও ব্ল্যাক সিড মিশ্রণ। এটি জিংক, আয়রন এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের ভালো উৎস।
Read more:কলোসিন্থ হোমিও ঔষধ
উপসংহার
সেহরি ও ইফতারে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, ইফতারের পর থেকে সেহরি পর্যন্ত ২ লিটারের মতো পানি খাওয়ার চেষ্টা করবেন। পর্যাপ্ত বিশ্রামের মাধ্যমে রোজার সর্বোচ্চ উপকারিতা লাভ করা সম্ভব।
আমার এই ‘সেহরি ও ইফতারের খাবার কেমন হওয়া উচিত’ আর্টিকেলটি যদি আপনাদের কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে শেয়ার করুন এবং কোন প্রশ্ন থাকলে আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন। ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
সিটি হোমিও
রূপায়ন মিলেনিয়াম স্কয়ার,দোকান নং-116
( গ্রাউন্ড ফ্লোর) -70, 70/Aপ্রগতি শরণি,
উত্তর বাড্ডা, ঢাকা 1212,বাংলাদেশ।
01736181642
Resources: https://www.prothomalo.com/lifestyle/health/3l3p9f5d5l